নিজস্ব প্রতিনিধি, দিনাজপুর: দিনাজপুরে পুলিশের অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে গ্রেফতার তিনটি মামলার ১১ আসামির মধ্যে ছয় জনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া অপর পাঁচ জনকে দুই দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুরের পৃথক তিনটি আদালতের বিচারক এই আদেশ দেন। এর আগে সকালে আসামিদের আদালতগুলোতে হাজির করা হয়।
দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪ (বিরল)-এর বিচারক শিশির কুমার বসু বিরল থানার দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো তিন জনকে একদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ (বোচাগঞ্জ) বিরল থানার দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো তিন জনকে একদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো পাঁচ জনকে জেলগেটে দুই দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ (সদর)-এর বিচারক ইসমাইল হোসেন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর পৃথক তিন থানায় তিনটি মামলায় ১১ জন আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে দিনাজপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সবাইকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করলে আদালত ২১ তারিখ শুনানির দিন ধার্য করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে জেলার সদর উপজেলা, বিরল উপজেলা ও বোচাগঞ্জ উপজেলার তিনটি মসজিদে অভিযান চালান ঢাকার অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। তাদের কাছে গোপন সংবাদ ছিলো, সেসব মসজিদে তাবলিগ জামায়াতের নাম করে আসা ব্যক্তিরা নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত এবং তাদের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই অভিযোগে ৪২ জনকে আটক করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বই ও সিডি উদ্ধার করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে তাদের মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করেন তারা। বাকিদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্যে ১১ জনকে আসামি করে তিনটি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। বাকি আট জনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউনিটের সদস্যরা ঢাকায় নিয়ে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আগেই বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযানে দিনাজপুর সদর উপজেলার মহারাজার মোড়ের পাশে মেদ্যাপাড়ায় বায়তুল ফালাহ্ জামে মসজিদ থেকে ১২ জনকে আটক করা হলেও মামলা হয় পাঁচ জনের নামে। তারা হলেন– ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার হরিকুণ্ডু গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রেদোয়ানুল হক কাভি (২১), ঢাকা মিরপুর ১২-এর মৃত কামাল উদ্দীন মজুমদারের ছেলে সাখাওয়াত আহমেদ বিন কামাল (২৭), চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানার ওয়াহেদপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মহসিন ভুঁইয়া (২৪), কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার চরহটর আলগি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ (২৪) এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লার পাইনিওয়ার হাউজিং কলোনির ওবায়দুল বারীর ছেলে নাফিস হাবিব (৩০)।
বিরল উপজেলার বিরল বাজার জামে মসজিদ থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে মামলা হয় তিন জনের নামে। তারা হলেন– রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর দৌলাপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে ওয়াহেদুজ্জামান (২৩), একই জেলার কাউনিয়া থানার নিজপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দীনের ছেলে মনিরুল ইসলাম (২২) এবং নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা নতুন বাবুপাড়ার আব্দুস সামাদ সাহেদের ছেলে সজল ওরফে সাব্বির আহমেদ (৩০)।
বোচাগঞ্জ উপজেলায় ৪নং আটগাঁও ইউনিয়নের বড়ুয়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মসজিদ থেকে সন্দেহ ভাজন ১৩ জন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে তিন জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তারা হলেন– রংপুর কোতোয়ালি থানার মুন্সিপাড়ার নকিম উদ্দীনের ছেলে আবু সায়েদ হাসান ওরফে রূপম (২৮), ঢাকার শ্যামপুর থানার রামুরহাট রক্তিম জুরায়েন গ্রামের মোস্তফা খানের ছেলে মো. জুনায়েদ খান (২৫) এবং দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার বরুয়াদৌলা গ্রামের ইয়াকুব মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবির (২৬)।
সান নিউজ/ এমবি