নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আর এতে আবারও চাঙা হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন বাজার। বাড়ছে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও।
কক্সবাজার শহরের বেশিরভাগ হোটেলগুলো ইতোমধ্যে পর্যটক পূর্ণ হয়ে আছে। ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টোয়াক) ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, তারকা হোটেলগুলোতে কোনো রুম খালি নেই। এরপর মাঝারি মানের যেগুলো আছে সেগুলো প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বুকড। ভেতরের দিকে কিছু হোটেলের রুম হয়তো খালি আছে। শহরে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, আবাসিক ফ্ল্যাট রয়েছে। অন্তত তিন লক্ষাধিক অতিথির জায়গা দিতে পারবে কক্সবাজার। শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক এসেছেন বলে আমাদের ধারণা। কোনো কোনো ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটকও আসেন। আমাদের অনুমান, দিন দিন পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।
আবারও চাঙা হচ্ছে এখানকার পর্যটন ব্যবসা। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির ও স্তরের পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন বিচ পয়েন্ট ছাড়াও প্রায় পুরো শহরজুড়েই পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
ট্যুরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় সিজন-অফসিজন মিলিয়ে দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০ লাখ পর্যটক আসেন কক্সবাজারে। টানা কয়েকদিনের ছুটিতে অথবা শীতের মৌসুমের সাপ্তাহিক দু’দিনের ছুটিতেই লক্ষাধিক পর্যটক আসেন কক্সবাজারে।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু কক্সবাজারেই পর্যটন খাতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। আর ‘লকডাউনের’ মতো কারণে এক মাস বন্ধ থাকলে কক্সবাজারে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা ও উদ্যোগে শুধু ক্ষতিই হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের কয়েক দফা ‘লকডাউনে’ কক্সবাজারের পর্যটন খাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন বলে এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান।
কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী বিচসহ আশপাশের সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এর পাশাপাশি কেনাকাটার জন্য ঝিনুক মার্কেটসহ বার্মিজ মার্কেট এবং বিচ সংলগ্ন মার্কেটগুলোতেও ক্রেতা সাধারনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। খাবারের হোটেল, রেস্তোরাঁ, সামুদ্রিক মাছ বিক্রির ভাসমান হোটেলগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল। সবমিলিয়ে নিজের চিরচেনা রূপে দেখা যায় কক্সবাজারে।
ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারমুখী যাত্রীর ব্যাপক চাপও লক্ষ্য করা যায়। সেন্টমার্টিন পরিবহনের অ্যাডমিন ও আইটি কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন, সাধারণত ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে আমাদের তিনটি গাড়ি ছেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে সেটা বেড়ে কখনও কখনও চার থেকে পাঁচটি হয়। তবে ২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারমুখী যাত্রীর এতবেশি চাপ ছিল যে, আমাদের সাতটি গাড়ি ছাড়তে হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণেরও বেশি।
পরিবহন, আবাসস্থল এবং খাবার ছাড়াও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সেবার ব্যবসাগুলোও অনেকদিন পর ভালো সময় পার করছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নিবন্ধিত ফটোগ্রাফার রহিম মোল্লা বলেন, এতদিন কেউ আসেনি, তাই আয়-রোজকার বন্ধ ছিল। খুলে দেওয়ার পর অল্প অল্প করে মানুষজন আসে। আজ শুক্রবার তাই অনেকে আসছে। আগের কিছুদিন এমন ছিল না।
কলাতলী মোড়ে সামুদ্রিক মাছ বিক্রির দোকানদার রাকিব উদ্দিন বলেন, আমরা তাজা মাছ বিক্রি করে রান্না করে পরিবেশন করি। আগের কিছুদিন গেস্ট আসবে মনে করে মাছ এনে বিক্রি করতে পারিনি। এখন আবার গেস্টরা আসছেন। এমন থাকলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
সান নিউজ/এনকে/এমএম