নিজস্ব প্রতিনিধি, নাটোর: নাটোরের সিংড়ার আরজু (২৭) মাঝিকে হত্যায় জড়িত বাইজিদ বোস্তামী (১৮) নামের এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এ তথ্য জানান।
এর আগে রাত পৌনে ১ টার দিকে গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর এলাকা থেকে আসামি বাইজিদ বোস্তামীকে গ্রেফতার করা। তিনি বিলহরিবাড়ি ওই এলাকার নাসির বোস্তামীর ছেলে। আর হত্যাকাণ্ডের শিকার আরজু সিংড়ার আনন্দনগর গ্রামের আদম আলীর ছেলে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, সিংড়ার চামারী ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামে আরজু মাঝির প্রতিবেশী এক স্কুলছাত্রীর সাথে বাইজিদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সূত্র ধরে বাইজিদ ওই গ্রামে ঘন ঘন যাতায়াত শুরু করে। আরজু হত্যাকাণ্ডের ৭-৮ মাস আগে আরজু ও তার এলাকার লোকজনদের সাথে বাইজিদের এই মেয়ে ঘটিত বিষয়ে হট্টগোল হয় এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তখন আরজু ও তার লোকজন বাইজিদকে ধাওয়া করে। এ ঘটনা থেকে তাদের মধ্যে শত্রুতা শুরু এবং এর জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার (২৮ আগস্ট) গুরুদাসপুরের বিলসা বিল থেকে আরজুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার পিতা আদম আলী গুরুদাসপুর থানায় এ হত্যাকাণ্ডে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের একটি টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বাইজিদ গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বাইজিদ পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
লিটন কুমার সাহা বলেন, বাইজিদ ও তার ২ বন্ধুসহ বৃহস্পতিবার সিংড়ার বিলদহর এলাকায় তিশিখালী মাজারে যাবার জন্যে ৭০০ টাকা দিয়ে আরজুর নৌকা ভাড়া করে। সেখান থেকে গুরুদাসপুরের হরদমায় গিয়ে আরো ২ বন্ধু নৌকায় উঠে এবং বিলসার দিকে যেতে বলে। তাদের দেখে ঘাবড়ে গিয়ে আরজু মাঝি তাদের নৌকায় উঠার কারণ জানতে চায়। তারা বলে বিলসায় গিয়ে সারা রাত পিকনিক করবে।
কিন্তু নৌকাটি হরদমা জোলার কাছে পৌঁছলে তারা আরজুকে নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। নৌকায় বাইজিদ তার বন্ধুদের সাথে গাঁজা সেবন করে। একপর্যায়ে তারা নৌকা বাঁধার রশি দিয়ে আরজুকে নৌকার ছইয়ের সাথে বেঁধে ফেলে। আর ২ বন্ধু আরজুকে বলে তোর জীবনের দাম কত? তুই না অনেক শক্তিশালী? তুই আমাকে তোর বাড়ির কাছে পেয়ে লাথি মেরেছিলি। মনে পড়ে সে কথা?
এমতাবস্থায় আরজু তাদের পায়ের কাছে মাথা রেখে বলেন, আমাকে মাফ করে দে। আমার শিশু বাচ্চা আছে। তোদের সাথে আমার কোন বিরোধ নাই। আমি নৌকা চালিয়ে কোন রকমে জীবন চালাই। তখন তারা আরজুর কাছে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। কিন্তু আরজু মোবাইলে কারো কাছে টাকা চেয়ে পায়নি।
এক সময় বাইজিদের বন্ধুরা বলে শালাকে শেষ করে দেই। ওর জীবনের কোন দাম নাই। বাঁচায়ে রেখে লাভ নাই। এই বলে তাদের মধ্যে একজন আরজুর মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মাথার পিছনে একাধিকবার কুপিয়ে জখম করে। এরপর আরজু নিস্তেজ হয়ে গেলে তাকে পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
সান নিউজ/এমকেএইচ