নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর: চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সরু একটি খাল। খালের সঙ্গে বা আশপাশে কোন সড়ক নেই। পূর্বে যে ছিল তারও কোন চিহ্ন নেই। লোকজনও এখানে ধানক্ষেত্রে পরিচর্যা বা ধান টাকার মৌসুম ছাড়া যান না।
ঠিক ওখানেই দয়া পরবশ হয়ে নির্মাণ করে দিয়েছেন টেকসই এক সেতু! সেতুটি কারা ব্যবহার করবেন তাও অজানা। সেতুটির আশপাশে বা সেতুতে কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় দূর থেকে দেখা স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নয়নাভিরাম সবুজ ধানক্ষেতের মাঝ মাঠে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেণ্ডাবাড়ী গ্রামের সোনামতি খালের দুই পাশেই ফসলের মাঠ। সেই খালেই আট লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
আট মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক এবং আশপাশে জনবসতি না থাকায় স্থানীয় লোকজন এই সেতুর নাম দিয়েছেন ‘এতিম সেতু’। বিএডিসির দাবি, মাঠ থেকে ফসল আনার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের সুপারিশে সেতুটি করা হয়েছে।
বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২০ সালে সেতুটির টেন্ডার হয়। কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোয়াদ কনস্ট্রাকশন। কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুনে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু বুঝিয়ে দিয়ে বিলও তুলে নিয়েছে।
সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই দিকে ফসলি জমি। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সরু একটি খাল। এই খালের ওপরই করা হয়েছে উঁচু সেতুটি। নেই কোনো সংযোগ সড়ক। যাতায়াতের জন্য জমির আইল ছাড়া কিছুই নেই।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেতুটির উত্তরে মূল সড়ক থেকে ফসলি জমির পাশ দিয়ে সরু একটি রাস্তা থাকলেও তাতে মাটি ভরাট করা হয়নি। আর দক্ষিণ দিকে শুধুই ফসলের মাঠ।
বিএডিসি কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছে, সেতুর পূর্ব পাশে রাস্তার অবয়ব থাকলেও পশ্চিম পাশে কোনো রাস্তা নেই। ফসল আনা-নেয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিশেষ চাহিদাপত্র ও ডিও লেটারের কারণে সেতুটি করা হয়েছে।
বিএডিসিকে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের বরাদ্দ এলে রাস্তা করা হবে।
স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হামরা ব্রিজ করতে কইচি, কিন্তু আস্তা না করলে হামাদের কষ্ট কমবে না। হামরা তো গাড়িত করি ধান নিবে (নিতে) পারব না। তো ব্রিজ দিয়ে কী হইবে? ব্রিজও চাই, আস্তাও চাই।’
সাইদুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘জমিত যাওয়ার জন্য মোটা আইল ছাড়া কিচ্চু নাই। আমরা হাঁটি হাঁটি যাই। দূর থাকি ধান, পাট বা অন্য ফসল আনতে কষ্ট হয়। আমরা কইচে খালের ওপর একনা ব্রিজ দিয়ে রাস্তা বানাইতে। ব্রিজ হইচে, রাস্তা হয় নায়। হয়তো বানাইবে। কিন্তু রাস্তা না বানাইলে ব্রিজ কামোত নাগবের নয়।’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোয়াদ কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী বেলাল মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভেণ্ডাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, খালের ওপর দিয়ে কৃষকদের ধান, পাট আনা-নেয়া করতে কষ্ট হয়। তাদের অনুরোধে সেতুটি করা হয়েছে। ধান কাটা হয়ে গেলে রাস্তার জমি বের করা হবে।
পীরগঞ্জ উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী রুবেল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন কাবিখার প্রজেক্ট নেই, সে জন্য রাস্তা করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। রাস্তাটা ওনারা করে দেবেন।’
রাস্তাটি খালের দুই পারের ফসল আনা-নেয়ার জন্য করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের চলাচল ও রিকশাভ্যান চলাচলের জন্য এটি করা হয়েছে। আমরা চেয়ারম্যানকে বলব, তিনি যেন দ্রুত রাস্তাটি করে দেন।’
সান নিউজ/এমএম