কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২৭০ বছরের ইতিহাস ভেঙে এই প্রথম লাখো মুসল্লির শোলাকিয়া নিস্তব্ধ থাকবে। লাখো মুসল্লির সমাগম থাকবে না, থাকবে না আগতদের মুখের লাব্বাইক ধ্বনি। যার সুরে সুরে মুখরিত হতো পুরো এলাকা।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পরও যে মাঠে কমতি হয়নি লাখো মুসুল্লির সমাগম, সে মাঠ এবার ১৯৩তম ঈদ জামাতে রবে নিরব। অদৃশ্য এক করোনাভাইরাস পাল্টে দিচ্ছে ইতিহাসের সব সমীকরণ।
শত শত বছর ধরে দেশের বৃহৎ ঈদ জামাত হতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায়। উৎসবমুখর পরিবেশ ও নির্বিঘ্নে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হতো একমাস আগে থেকেই।
গত ১৫ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ১৯৩তম ঈদ জামাত হচ্ছে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন, জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।
তিনি বলেছিলেন, শোলাকিয়ায় লাখো মুসুল্লির সমাগম হয় বিধায় তাদের শারীরিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঈদের জামাত খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায় করতে হবে। তাই একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, শোলাকিয়া কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের একটি বৃহৎ ও পুরাতন জনবসতি এলাকা। বর্তমান শোলাকিয়ার পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়ীয়া। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব উত্তরকোনে নরসুন্দা নদীর অববাহিকায় শোলাকিয়া এলাকাটির অবস্থান। জনশ্রুতি আছে, শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রথম বড় জামাতে সোয়ালাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আবার কারো কারো মতে মুঘল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়ালাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে 'সোয়ালাখ' থেকে 'সোয়ালাখিয়া', সেখান থেকে বর্তমান শোলাকিয়া নামে উৎপত্তি।
দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে জমি ওয়াকফ করেছেন। সে ওয়াকফ নামায় লেখা আছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুযায়ী, শোলাকিয়া মাঠের বর্তমান বয়স ২৭০ বছর। তারপর ১৮২৮ থেকে জঙ্গলবাড়ীর জমিদার এ মাঠে নামাজ পড়তে শুরু করেন। তখন থেকেই বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।