নিজস্ব প্রতিনিধি, বগুড়া: বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে সিনেমা স্টাইলে এক রোগীর স্বামীকে সিনেমা স্টাইলে মারধর ও তাকে বাঁচাতে গেলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি দিযেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে হাসপাতালের দোতলায় গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ গৃহবধূর জয়নব বেগমের (২১) পেটে লাথি দেওয়ার পর তার রক্তক্ষরণ শুরু হয় বলে জানা গেছে। চিকিৎসকদের ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে রাতেই ওই নারীকে শহরে ইসলামিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। খবর পেয়ে উদ্ধার করতে গেলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির তিন সদস্যকেও মারধর করা হয়েছে।
জানা গেছে, গুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের নন্দগ্রামের বাসিন্দা ও ডোমনপুকুর কামিল মাদ্রাসা মসজিদের খতিব মাওলানা আসলাম আলী মুজাহিদী অভিযোগ করেন, তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কয়েক দিন ধরে বমি করছিল। গত বুধবার তাকে শজিমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হয়।
এ সময় কর্তব্যরত নারী চিকিৎসকদের অবহিত করলে তারা আসেননি। এর আগে থেকে তার স্যালাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। জয়নবের মা ইন্টার্নদের কক্ষে গিয়ে অনুরোধ করলেও তাকে জানানো হয় রোগী মারা গেলে তাদের কিছু করার নেই। পরে অসহায় স্বামী মাওলানা মুজাহিদী বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য তার মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও এবং অন্য রোগীর স্বজনদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন। তখন চিকিৎসকরা বাধা দিলে তিনি ভিডিও বন্ধ করে দেন।
মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে মাওলানা মুজাহিদী রোগীর ফাইল নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে ছুটে যান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় অন্তত ৫০ চিকিৎসক ও ইন্টার্ন একত্র হয়ে তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। তার চিৎকারে ছোট ভাই জাকির হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়।
এতেও রাগ না মিটলে চিকিৎসকরা মাওলানা মুজাহিদীকে ইন্টার্নদের কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন। অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জয়নব বেগম খবর পেয়ে সেখানে ছুটে এলে ক্ষিপ্ত এক চিকিৎসক তার পেটে লাথি দেন। অন্যরা তাকে কিল-ঘুষি মারেন। লাথি দেওয়ার পর জয়নবের রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
এদিকে খবর পেয়ে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান, কনস্টেবল শফিউল ও অরূপ বিশ্বাস গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসকদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তারও পেটে লাথি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওরা কনস্টেবল অপরূপ ও শফিউলকে বেধড়ক মারপিট করেন। ইন্টার্নদের হামলার সময় রোগীর স্বজনরা তাদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে উল্লেখ করে বগুড়ার ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান জানান, হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের প্রচণ্ড অবহেলা করে থাকেন। প্রতিবাদ করলেই ঘরে আটকে রেখে মারধর করে থাকেন।
এর আগে গত মার্চে ছুরিকাঘাতে আহত জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মারা গেছেন। তারা প্রায় চার মাস আগে গাবতলীর রূপম নামে চেয়ারম্যানকে মারধর করেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তারাও (পুলিশ) লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হট্টগোল হয়েছিল। পুলিশ এলে তারাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি; শুধু ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারার ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ