নিজস্ব প্রতিনিধি,চট্টগ্রাম: বিয়ের আগে স্ত্রী জানতে না স্বামীর ধর্মের কথা। কারণটা যে ভালোবেসে বিয়ে। ধীরে ধীরে বিষয়টি সামনে আসার পরই ২৪ বছর বয়সী তরুণীকে বিসর্জন দিতে হয় নিজের পরিবারকে। ভালোবাসার মানুষটির দিকে তাকিয়ে সবকিছুই মানিয়ে নিচ্ছিলেন।
হঠাৎ একদিন স্ত্রী নিজেই হলেন লাশ। আর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী স্ত্রীকে কবর না দিয়ে তড়িঘড়ি লাশটি পুড়িয়ে ফেলেন স্বামী। এরপর শাশুড়িকে ফোনে জানালেন সৎকার শেষ।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নে। ৩ আগস্ট একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যৈষ্ঠপুরার রণজিত দের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূর নাম ইয়াছমিন আক্তার অ্যানী। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকাররমসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার মা রোকসানা বেগম। চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন তিনি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারের অনটন মেটাতে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন অ্যানী। চাকরির সুবাদে বন্দরটিলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে একই এলাকার সেলুন কর্মচারী বাবুল দের সঙ্গে অ্যানীর পরিচয় হয়। বাবুল নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের পর বাবুল হিন্দু বলে জানতে পারেন অ্যানী। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার। অ্যানীর এ অসহায়ত্বের সুযোগ নেন বাবুল। জোর করে তাকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করতে থাকেন বাবুল ও তার পরিবার।
ঘটনার তিনদিন আগেও খালাতো বোন হাসিকে অ্যানী জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন তার স্বামী বাবুল। তাই তিন হাজার টাকার প্রয়োজন। বিষয়টি তার মাকে জানাতে বলেন। কিন্তু অ্যানীর মা টাকা দিতে না চাইলে বাবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন।
পরে ৩ আগস্ট বিকেলে বাবুল মুঠোফোনে হাসিকে জানান, অ্যানী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিতে চান অ্যানীর মা। কিন্তু ওই রাতেই বাবুলের ভাই পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে মাকে যেতে নিষেধ করেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ লোকজনের পরামর্শে লাশ সৎকার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
একজন মুসলিম মেয়েকে কীভাবে সৎকার করা হয়েছে জানতে চাইলে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শে লাশ পুড়িয়ে সৎকার করা হয়েছে বলেও জানান বাবুলের ভাই পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি।
অ্যানীর পরিবারের দাবি, তাদের মেয়েকে হত্যার পর দায় থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি লাশ আগুনে পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করেছেন আসামিরা। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় নিজেরা মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয় বোয়ালখালী থানা পুলিশ।
এদিকে জানতে চাইলে ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকাররম। মূলত হয়রানি করতেই একটি পক্ষ মামলায় তার নাম জড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বোয়ালখালী থানার ওসি মো. আবদুল করিম বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ নিয়েছে আদালত। তদন্ত চলমান রয়েছে।
সাননিউজ/এএসএম