নিজস্ব প্রতিনিধি, লালমনিরহাট : ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকাল ৩টায় এ পয়েন্টে তিস্তার পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ পাঠক মো. আমিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত সোমবারও (১৬ আগস্ট) ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। গত কয়েক দিন ধরেই ওঠানামার মধ্যে ছিল তিস্তার পানি। এতে জেলার ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত প্রায় ১৫ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, পাঁচ দিন ধরে তিস্তার পানি ওঠানামা করছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। এতে তিস্তা তীরবর্তী মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। আজ আবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। এতে ইউনিয়নের পাগলীরবাজার ও টাপুরচর গ্রামের ৬০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়াও টাপুরচরের তীররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম না থাকায় মানুষজন প্রবল খাদ্য সংকটে পড়েছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় ওই বাঁধে বালুর বস্তা ফেলছে।
একই উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছাতুনামা, কেল্লাবাড়ি, ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের একাধিক বাড়িতে ফের পানি প্রবেশ করায় শুকনো খাবারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের প্রায় ৭০০ ঘরে পানি বিরাজ করছে। তিস্তা পাড়ের মানুষ বন্যার ফাঁদে পড়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরা, কাজকর্ম না থাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সেদিন সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এরপর কিছুটা কমে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১০, বেলা ১২টায় কিছুটা বেড়ে সাত এবং বিকাল ৩টায় চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সোমবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এরপর সকাল ৯টায় কিছুটা কমে সাত, বেলা ১২টায় ছয় এবং বিকাল ৩টায় দুই সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাফউদদৌলা বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢল ও অনবরত বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় হঠাৎ ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায় বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। আগামীকাল ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে বাকি ইউনিয়নগুলোতে ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।
সাননিউজ/ জেআই