নিজস্ব প্রতিবেদক: হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছিলেন।
তিনি ২০২০ সালে হেফাজতের আমির হন। আমৃত্যু তিনি এই পদেই ছিলেন। এর আগে প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফি আমির থাকাকালীন মহাসচিব পদে ছিলেন তিনি। একই সাথে চট্টগ্রামের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদেও ছিলেন।
বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন। হারুন বাবুনগরী তার নানা। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী তার মামা, যিনি হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা।
জুনায়েদ বাবুনগরী ৫ বছর বয়সে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। সেখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।
এরপর ১৯৭৬ সালে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। দুই বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করে তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
পরে ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে বাবুনগরী দেশে ফিরে বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় যোগ দেন। এরপর হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন তিনি।
২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে বাবুনগরীকে মহাসচিব করা হয়। পরে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির আমির মৃত্যুবরণের পর ১৫ নভেম্বর সংগঠনের একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি আমির নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদ্রাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি বাবুনগরীর অনুসারীরা। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়।
এই আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে মাদ্রাসার দায়িত্ব মজলিসে শুরাকে দিয়ে দেন। ওইদিনই তিনি ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে বাবুনগরীসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। বাবুনগরী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এছাড়া চলতি বছরে ২৫ এপ্রিল হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক এবং সর্বশেষ ৭ জুন তিনি হেফাজতের আমির নিযুক্ত হন।
এছাড়া বাবুনগরী বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার আরবি, উর্দু ও বাংলায় রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। এর মধ্যে রয়েছে- সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী, তালিমুল ইসলাম, বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত, ইসলামে দাড়ির বিধান, তাওহীদ ও শিরক: প্রকার ও প্রকৃতি, মুকাদ্দিমাতুল ইলম: তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ, ফতোয়া, আকাবিরে দেওবন্দের সিলসিলায়ে সনদ।
সান নিউজ/এমকেএইচ