নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি শেরপুরের শ্রীবরদীতে বনবিভাগ কর্তৃক গারো আদিবাসীদের ফসল কেটে ফেলার প্রতিবাদে এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাজং আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়নকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজং এর সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ আাদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ’র সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রুপম, শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন কণা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বুশ নকরেক, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ হাজং, কোচ আদিবাসী ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক গৌর কোচ, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নাইম হাজং, গাসুর সতীর্থ চিরান, জিএসএফ এর লেবীয় ম্রংসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, সামাজিক বনায়নের নামে শেরপুরের শ্রীবরদীতে বনবিভাগ কর্তৃক গারো আদিবাসীদের জুমের ফসল কেটে ফেলায় প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার সমপরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাঁচটি আদিবাসী পরিবার। উচ্ছেদ আতংকে রয়েছে অর্ধশতাধিক আদিবাসী পরিবার।
এ ব্যাপারে তিনি রাষ্ট্রের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ এরকম জঘন্যতম কাজে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট অফিসারকে দ্রুত অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, শুধু শেরপুরের ঘটনায় নয়, দেশের সিলেট, টাঙ্গাইল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেও আদিবাসীদের উচ্ছেদের যড়যন্ত্র করছে বন বিভাগ। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাজং নারীর উপর ধর্ষণকারী রাশিদ মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া গারো কিশোরীর ধর্ষণকারী ফারুককে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান এই আদিবাসী ছাত্রনেতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রুপম উত্থাপিত দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেন, বিগত দেড় বছর ধরে এদেশের মানুষ করোনায় আক্রান্ত, দেশ বিপর্যস্ত, ঠিক এই সময়েও আদিবাসীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন, ভূমি দখল, নারীর উপর সহিংসতা থেমে নেই। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও আদিবাসীদের মৌলিক আধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশ বহু জাতির, বহু সংস্কৃতির, বহু ভাষার দেশ। কিন্ত এই বৈচিত্র্যতা দেশের শাসক গোষ্ঠী তথা সরকার স্বীকার করতে চায় না।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের উচিত সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের আরেক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন কণা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে দেশে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণকারীরা দ্রুত জামিন পাওয়ার কারনে দেশে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই শিক্ষক। তিনি আজকের এই সমাবেশ থেকে আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, নির্যাতন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।
তিনি আরো বলেন, শুধু যে সুনামগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গলে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতা ঘটছে তা নয়, দেশের পাহাড় এবং সমতলে সকল নারীরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। রাষ্ট্রের কাছে তিনি সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, বন যেখানে আদিবাসী সেখানে। আদিবাসী যেখানে বনও সেখানে। যখন বনবিভাগ ছিলনা তখন বন ভালো ছিল।
কিন্ত যখন থেকে বন বিভাগ বন রক্ষার দায়িত্ব নিলো তখন থেকে বন উজাড় হওয়া শুরু হলো। যারা বনের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারাই আজকে বন ধ্বংস করে আদিবাসীদের নামে মিথ্যা বন মামলা দিয়ে আদিবাসীদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। অবিলম্বে আদিবাসীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান আদিবাসী যুব ফোরামের এই নেতা।
উক্ত সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়:
১. শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচটি গারো আদিবাসী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই রকম জঘন্যতম কাজে সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট অফিসারকে অপসারণ ও শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২. আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির অধিকার দিতে হবে।
৩. হাজং আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়নকারীর দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৪. মৌলভীবাজারের ডলুছড়া এবং সাহেব টিলার গারো ও খাসিয়া আদিবাসীদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
৫. সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
সাননিউজ/এএসএম