নিজস্ব প্রতিবেদক: শোকের মাস আগস্ট। আগস্ট জুড়েই শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে শোকের মাসে সারা দেশের কোন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ অথবা কোন সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন ও অনুমোদন কিংবা অন্যান্য সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোরও নজির নেই।
তবে উল্টো ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের সালথায়। শোকাবহ আগস্টেই কমিটি ঘোষণা করে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিল সালথা উপজেলা কৃষক লীগ। এ নিয়ে দলের ভেতরে ও এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনাও।
কমিটি ঘোষনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট সালথায় কৃষকলীগের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার রসুলপুর হামিদ মঞ্জিলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উপজেলা কৃষক লীগ। ওই সভায় ফরিদপুর জেলা কৃষকলীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক এ্যাড. প্রদীব কুমার লক্ষনের উপস্থিতিতে সালথা উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রতিনিধি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী।
দুই সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে আহব্বাযক হিসেবে আব্দুল ওয়াহাব মোল্যা ও যুগ্ম-আহব্বায়ক হিসাবে আমীন খন্দকারের নাম ঘোষনা করা হয়। পরবর্তিতে ৩১ সদস্য বিবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হবে বলেও জানানো হয়। কমিটি অনুমোদন শেষে লাবু চৌধুরীর নির্দেশনায় কৃষকলীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষনার পরে নবগঠিত কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আমিন খন্দকার তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে পোষ্ট দেন।
শোকের মাসে কমিটি অনুমোদন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান গত সপ্তাহে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শোকের মাসের কারণে উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের শাস্তির সিদ্ধান্ত এখনও আটকে আছে।’ অথচ শোকের মাসের ধার না ধেরেই যদি কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কমিটি গঠনের মতো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে দলের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভঙ্গ করে প্রকারান্তরে জাতির জনকের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করেছে—এমন অভিযোগ দলের সিনিয়র অনেক নেতার।
এদিকে সদ্য ঘোষিত কমিটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আমিন খন্দকার বলেন, আসলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ৩১ সদস্য বিশিষ্ট হবে এখন আপাতত আহব্বায়ক ও যুগ্ন আহব্বায়কের নাম ঘোষনা করা হয়েছে। অনুমোদনের কোন কপি আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কমিটি ঘোষনার সময় জেলা কমিটির সভাপতি - সম্পাদক দুজনেই উপস্থিত ছিলেন তারাই এটার অনুমোদন দিয়েছে।
আর কাগজে তাদের সাক্ষর দিয়েই অনুমোদন হয়েছে। তবে কাগজ দিবেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে। আর কমিটি লাবু চৌধুরীই ঘোষনা করেছে। তার নির্দেশনায়ই কমিটি হয়েছে। আসলে জেলা কমিটিরও ইচ্ছা ছিলো লাবু চৌধুরী আসলে আমাদের কমিটি অনুমোদন দিবে সেই মাফিকই কাজ হয়েছে।
শোকের মাসে কমিটি অনুমোদন কেনো এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আমিন বলেন, আসলে লকডাউনের জন্য সমস্যাটা হয়েছে। শোকের জন্য যেহেতু লকডাউন খুলে দিয়েছে তাই সুযোগ বুঝে কমিটিটাও অনুমোদন ও ঘোষনা করা হয়েছে। পরে আবার লকডাউন দিলে আবারও বিলম্ব হবে তাই এটা করা হয়েছে ।
কমিটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আহবায়ক আব্দুল ওয়াহাব মোল্যা বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে সাথে নিয়ে গত ১৪ তারিখে লাবু মামা আমাদের কমিটিটা করেছে। এটাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও বলা যায়। আবার বলতে পারেন এটা দুই সদস্য বিশিষ্ট আহব্বায়ক কমিটিও। কারন এটাই চূড়ান্ত করে গ্রহন করেছে জেলা কমিটি।
আসলে দীর্ঘদিন আমাদের সালথা উপজেলা কৃষকলীগের কোন কমিটি ছিলো না। তাই লাবু মামা বিষয়টি উপলব্ধি করেই জেলা কমিটির সহায়তায় এই কমিটিটা করেছে।শোকের মাসে কমিটি গঠন কেনো এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আসলে এই কৃষকলীগটা পূর্ণতা পায় কিন্তু এই আগষ্ট মাসেই। এখন এটা উদ্ধতন মহল করেছে তারাই ভাল বলতে পারবেন এখানে আমার কোন মন্তব্য নেই।
জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, সালথায় আমরা আহব্বায়ক ও যুগ্ন আহব্বায়কের নাম ঘোষনা করেছি। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো করিনি ওটা প্রক্রিয়াধীন। এখন লোকাল পলিটিক্সের ও সাজেদা আপার ছেলে লাবু মামা ওই দুই জনের নাম সুপারিশ করেছে তাই আমরা তাদের নিয়ে নিছি। আমরা ফিজিক্যালি ওখানে গেলাম সবার সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুজনের নাম দিয়েছে আমরা সেটা গ্রহন করেছি আর আমরা গ্রহন করা মানেই অনুমোদন হওয়া। আসলে আমরা আহবায়ক ও যগ্ন আহবায়ককে গ্রহন করেছি তাই বলে অনুমোদন হয়নি এমন কিছু নয় ধরে নিতে পারেন অনুমোদিত হয়েছে।
শোকের মাসে কেনো কমিটি ঘোষনা করা হলে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ঘোষণাকারী শাহদাব আকবর লাবু চৌধরীর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।
সাননিউজ/এএসএম