নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : এক হাজার সফল সন্তান প্রসবের পর দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের ‘ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক’। জেলার জুড়ি উপজেলার জায়ফর নগর ইউনিয়নের এই ক্লিনিক থেকে বিনা মূল্যে সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মায়েরা।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, প্রসূতিরা স্বচ্ছন্দে আছেন সেখানে। অনেকে এসেছেন নিয়মিত চেকআপের জন্য।
এখানে বিশেষ উন্নত কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাদের মৌলভীবাজার শহরে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয় বলে জানান ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হানিফুল ইসলাম।
সেবা গ্রহিতা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা গ্রামের গৃহবধূ খদিজা আক্তার জানান, তার বাবার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চান্দেগোল গ্রামে। স্বামী থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। তিনি সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর নিরাপদ প্রসবের জন্য নিজের স্বাধ্য অনুযায়ী ভাল হাসপাতাল খুঁজছিলেন।
তিনি বলেন, এই ক্লিনিকের খবর জানতে পেলে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে চলে আসি। এখানে প্রথমেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গত মঙ্গলবার সকালে আমার ছেলে হয়েছে। ছেলে ও আমি ভালো আছি। বিনা খরচে ভালো ডেলিভারি হয় এখানে।
ক্লিনিকের প্রসবকর্মী লিপা খানম এখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘নয় বছর আগে ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর স্থানীয় প্রসবকর্মী জুলেখা খাতুন কাজ শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে। জুলেখা ২৫২টি ডেলিভারি সম্পন্ন করে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে চলে যান। এরপর আমি দায়িত্ব নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে এখন পর্যন্ত ৭৫১টিসহ এক হাজার তিনটি স্বাভাবিক প্রসবে অংশ নিয়েছি।’
ক্লিনিক পরিচালনায় থাকা সাপোর্ট গ্রুপের সভাপতি ফকরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘আমার ভাই জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম মাস্টার প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করেছেন। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। অপর ভাই মইনুল ইসলাম জমি দিয়েছেন। পরে জুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষিত বেসরকারি প্রসবকর্মী জুলেখা খাতুনকে অনুরোধ করে তার মাধ্যমে কাজ শুরু হয়।’ ক্লিনিক পরিচালনার জন্য আশপাশের ছয় গ্রামের মানুষের সমন্বয়ে দুটি সাপোর্ট কমিটি রয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সমরজিৎ সিংহ বলেন, ‘স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক একটি দৃষ্টান্ত। একটি মডেল। সিলেট বিভাগের সব কমিউিনিটি ক্লিনিকের মধ্যে এর স্থান প্রথম।’
২০১৩ সালে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পুরস্কৃত করেন বলে জানান এর কোষাধ্যক্ষ রফিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘শুধু সফল নিরাপদ ডেলিভারি নয়, শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক হিসেবেও আমরা পুরস্কার পেয়েছি। এছাড়া জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আরও অনেক পুরস্কারে ভুষিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।’
সাননিউজ/এমএইচ