নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর: বিধবা সমলা বেগম। বয়স আশির ঊর্ধ্বে। বেশিদিন কাটে তার অনাহারে-অর্ধাহারে। অভাবের তাড়নায় দুই ছেলে আলাদা করে দিয়েছে তাকে। উপায়হীন একজন মানুষ। মানুষের দেওয়া সাহায্যে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। একসময় মানুষের বাড়িতে আর ধানের খলায় কাজ করলেও এখন বয়সের ভারে তা আর পারেন না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। নানা দুর্ভোগে দিন কাটছে তার।
শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের খৈলকুড়া এলাকায় রাস্তার পাশে বসে কাঁদছিলেন তিনি।
এ সময় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের করোনা টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করে ফিরছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ। রাস্তার পাশে বসে থাকা বৃদ্ধাকে দেখে চালককে গাড়ি থামাতে বলেন তিনি। পরে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে দেখেন বৃদ্ধা কাঁদছেন।
কেন কাঁদছেন- জানতে চাইলে বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম দুচোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ঘরে খাবার নাই। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। একটু সাহায্য পাওয়ার আশায় বসে আছি।
বৃদ্ধার আর্তনাদ শুনে ইউএনও তার গাড়িতে তোলেন তাকে। পরে ইউএনও’র গাড়ির চালকের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী কিনে তুলে দেন বৃদ্ধার হাতে। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি আলু, ১ লিটার তেল, ১ কেজি লবণ ও একটি সাবান। পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য ভাড়া দিয়ে রিকশায় তুলে দেওয়া হয় বৃদ্ধাকে।
এ সময় খাবার পেয়ে ইউএনওর জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাত করেন বৃদ্ধা।
জানা যায়, বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম উপজেলার খৈলকুড়া গ্রামের মৃত ছোবহানের স্ত্রী। তার এক ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রেতা ও অপরজন দিনমজুর এবং একমেয়ে বিয়ে করে সংসার করছেন।
বিধবা বৃদ্ধা সমলা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে মানুষের বাড়িতে আর ধানের খলায় কাজ করে সন্তানদের খুব কষ্টে বড় করেছি। কিন্তু এখন ওদেরও অভাব। তাই তারা আমাকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন বয়সের ভারে আর কাজ করতে পারি না। কয়দিন ধরে ঘরে খাবারের কিছুই নাই। কী খাব। তাই সাহায্য পাওয়ার আশায় রাস্তায় বসে ছিলাম, ইউএনও স্যার দেখে আমারে খাবার দিছেন। দোয়া করি আল্লাহ তার ভালো করুক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ বলেন, মানুষ হিসেবে একজন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সহযোগিতা করেছি। এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
তিনি আরও বলেন, কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার যদি খাদ্য সঙ্কটে থাকেন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন দিলে খাবার পৌঁছে যাবে।
সাননিউজ/ জেআই