নিজস্ব প্রতিবেদক:আসন্ন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ( ৯ই আগস্ট) কে সামনে রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আজ (৬ আগস্ট) আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুলভ চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ- এর সঞ্চালনায় অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত “আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংলাপ” শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ।
আলোচনায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক রিপন চন্দ্র বানাই বলেন, এ বছরের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য :
“Leaving No One Behind: Indigenous peoples and the call for a new social contract.”
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম যার বাংলা রুপ করেছে “কাউকে পেছনে ফেলে নয়: আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহবান” ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রতিপাদ্যটি বাংলাদেশের আদিবাসীদের প্রেক্ষাপটে খুবই অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের আদিবাসীদের এখনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। সে কারণে তারা রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রেই বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। সেজন্য আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে কেবল সামাজিক নয় রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার প্রয়োজন।
বাংলদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান বলেন, ৭২ এর সংবিধান এর যে চেতনা, সংবিধানের যে ৪ মুলস্তম্ব গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সে অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা আমরা করি। সেভাবেই রাষ্ট্র এদেশের আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা আমরা করি।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেব বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন ১০৭ অণুসমর্থন করেছে। যদিও আইএলও কনভেনশন ১৬৯ অণুস্বাক্ষর এখনো পর্যন্ত করেনি। আমরা আশা করি আইএলও কনভেনশন ১৬৯ কে সমর্থন প্রদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র এদেশের আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা বলেন, আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে আদিবাসী ছাত্র ও যুবদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরন্তর লড়াই-সংগ্রাম পরিচালনা করার অন্য কোন বিকল্প নেই। আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই-সংগ্রামে সামিল হই, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসি।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, আদিবাসী সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা, এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানান। অবিলম্বে এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানান এ ছাত্রনেতা।
কোচ-রাজবংশী-বর্মণ সংগঠনের বকুল চন্দ্র বর্মণ বলেন ২০০৯ সালে প্রণীত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন এ একদিকে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যদিকে আবার আদিবাসীও বলা হয়েছে। আমরা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি অথচ আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আজকে পর্যটনের নামে আদিবাসীদের জমি বেদখল করা হচ্ছে। সমাজের কোন অংশকে পেছনে ফেলে রেখে কোনভাবেই সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথকভাবে একটি ভূমি কমিশন গঠন করা আজ সময়ের দাবী।
সভাপতিত্বের বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুলভ চাকমা বলেন দেশে প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসীর বসবাস রয়েছে। আদিবাসীদের ভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি অধিকার বিষয়ে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট বিধিব্যবস্থা থাকা দরকার। সংবিধানের বিদ্যমান ধারাগুলোর আলোকেও কিন্তু আদিবাসী অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন আইন প্রণীত হতে পাওে, আদিবাসী মন্ত্রণালয় বা আদিবাসী কমিশন গঠন হতে পারে।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টিং টিং উ রাখাইন, জেমি তঞ্চঙ্গ্যা, খাসিয়া স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সদস্য ফ্লোরা ধর প্রমুখ, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি প্রেম ত্রিপুরা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাস মাহাতো প্রমুখ।
উক্ত আলোচনা সভায় আদিবাসী ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দ ৬ টি দাবি উত্থাপন করেন:
১. আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. সরকারি চাকুরীতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনঃ বহাল করতে হবে।
৫. আদিবাসী সকল জাতিগোষ্ঠীর স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত সহ আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৬.করোনাকালে পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে হবে।
সাননিউজ/এএসএম