শওকত জামান,জামালপুর: বর্ষার পানিতে খাল বিল নদী পানিতে থৈ থৈ। পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারিরা মেতে উঠেছে মাছ ধরার উৎসবে। তাই চাহিদা বেড়েছে মাছ ধরার উপকরণ দারকি অনেক স্থানে চাই নামে পরিচিত। দারকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বাঁশ বেত শিল্পীরা। তদের হাতে বানানো দারকি বিক্রির ধুম পড়েছে মাছ শিকারিদের কাছে। তারা বাজার থেকে দারকি কিনে আনছে। কেউ কেউ দারকি গ্রামে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছে। চাহিদা মেটাতে দিনরাত পরিশ্রম করে দারকি তৈরি করছে কারিগররা। বেচা বিক্রি ভাল হওয়ায় হাতে টাকা পেয়ে দারকি পাড়ার কারিগরদের মনে আনন্দ বইছে।
জামালপুরের ইসলামপুরের দারকিপাড়ায় ঘুরে চোখে পড়লো গ্রামজুড়ে বাড়িতে বাড়িতে নারী-পুরুষ ও শিশুরাও দারকি তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। একেকটা বাড়ি যেন দারকি তৈরির কারখানা। দারকি বিক্রি করে জীবন চলে দারকি তৈরি কারিগরদের। দারকির বুননে বুননে মিশে রয়েছে তাদের কষ্টগাঁথা জীবন। শত কষ্টের মাঝে
ধারদেনায় পুঁজি খাটিয়ে স্থানীয় মানুষ বাপ দাদার পেশাটি আঁকড়ে ধরে আছে দারকি কারিগররা।
গ্রামের নাম বীর হাতিজা। গ্রামটির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে জামালপুরের মেলান্দহ ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত রেখা। নোমান্সলেন্ডে বাস করে ২৫০টি পরিবারে ৭ শতাধিক মানুষ। এ গ্রামের অধিকাংশই বংশ পরম্পরা ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মাছধরার দারকি তৈরি পেশার সাথে জড়িত। গ্রামটি দারকি গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়ী যেন দারকি তৈরির ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানা।
পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সারাদিন দারকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের। বাঁশের তৈরি এ পণ্যটি কোথাও বলে দারকি,কোথাও বাইর আবার কোন স্থানে চাঁই। একেক এলাকায় মাছ ধরার দারকি একেক নামে পরিচিত। দারকি তৈরির নারী কারিগর মনোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, পুরো দারকি একজনে তৈরি করেনা। একেকজন একেকটা তৈরি করে। প্রথমে বাঁশ কেটে কাঠি তৈরী, তারপর শলা,পা দিয়ে ডলা,গুণন,বুনন,গাঁথুনি,ফিটিং সবশেষে কর্ণার বেঁধে দারকির পূর্ণ রূপ দেয় কারিগররা।
প্রতিটি দারকি তৈরিতে খরচ হয় ১৫০ টাকা তা বাজারে বিক্রি করি আড়াইশ থেকে ৩’শ টাকায়। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের এই সময়ে মাছ ধরার মৌসুমে পণ্যটির ব্যাপক চাহিদা মাছ শিকারিদের কাছে।
এখানকার তৈরি দারকি ঢাকার বিক্রমপুর,কলিগঞ্জ,টঙ্গি ও জয়দেবপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানালেন ৪৫ বছর বয়সী আমেজ মিয়া। তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারের প্রতিটি সদস্য দারকি কারিগর। জন্মের পর বুঝার বয়স থেকেই মা,বাবার দারকি তৈরি দেখে খেলার ছলে দারকি কারিগর হয়ে গড়ে উঠছে এখানকার শিশুরা। আমিও ৫ বছর বয়সে মা’বাবার কাছে দারকি বানানো শিখেছি। ৪০ বছর ধরে দারকি তৈরি করে আসছি। খরচ বাদ দিয়ে সংসার ভালই চলে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে দারকি বেচাবিক্রি না হওয়ায় অর্থকষ্টে জীবন পার করতে হয়। ভাল মন্ধেই বাপ’দাদার পেশা আঁকরে ধরে আছি। কি করমু অন্য কিছুতো শিখি নাই।
সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ক্ষুদ্র বাঁশবেত শিল্পটি ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বাভলম্বি করে তুলবে দারকি শিল্পদের আশা এই পেশায় নিয়োজিত কারিগররা।
সাননিউজ/ জেআই