নিজস্ব প্রতিনিধি, বগুড়া: কলাপড়া ও ফিটকিনি পড়া খেয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মা আদুরী খাতুন ও কবিরাজ কেছেমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়া জেলার ধুনটে এ ঘটনা ঘটে। নবজাতক শিশু সন্তানকে হত্যার পর ট্যাংকিতে ফেলে দিয়েছিলো মা আদুরী খাতুন। পুলিশ শনিবার তাকে গ্রেফতারের পর নিজের শিশু সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অপরাধে কেছেম (৪৫) নামে এক ভুয়া কবিরাজকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই কবিরাজকে রোববার ধুনট থানা হাজত থেকে বগুড়ার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পারধুনট গ্রামের হোসেন প্রামানিকের ছেলে অসীমের সঙ্গে ৭ বছর আগে চান্দারপাড়া গ্রামের আয়তুল্লাহ্ মন্ডলের মেয়ে আদুরীর বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৫ বছর বয়সী এক ছেলের পর এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শিশুটির ফুসফুসে ফুটো রয়েছে বলে ডাক্তার জানায়। এরপর গত ১৬ জুলাই আদুরী তার এক মাস আট দিন বয়সী শিশুকে চিকিৎসা না করিয়ে বাবার বাড়ি চান্দারপাড়া গ্রামে চলে আসে এবং বাচ্চাটিকে কবিরাজী চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী কবিরাজ কেছেমের শরণাপন্ন হয়।
গত ১৭ জুলাই সকাল ৯টার দিকে শিশুটির বাবা অসীম, নানী চম্পা খাতুন ও মা আদুরী খাতুন কবিরাজের বাড়িতে গেলে কেছেম কবিরাজ তাদেরকে কলাপড়া, ফিটকারী পানি পড়া, তেলপড়াসহ তাবিজ দেয়। এরপর বিকেল ৫টার দিকে আদুরী খাতুন কবিরাজের দেয়া ফিটকারী পানি নিজে খায় এবং শিশুটিকে খাওয়ায়। এরপর শিশুটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন শিশুটি মারা গেছে ভেবে আদুরী খাতুন তার মায়ের বাড়ির ল্যাট্রিনের ট্যাংকির ঢাকনা খুলে শিশুটিকে সেখানে ফেলে দেয়। এরপর শিশুকে জিনে নিয়ে গেছে বলে নাটক সাজায় আদুরী। পরে স্থানীয় লোকজক অনেক খোঁজাখুজির পর ১৮ জুলাই বিকেলে ল্যাট্রিনের ট্যাংকি থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা অসীম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শেষে শনিবার শিশুটির মা আদুরীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়। এরপর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা এবং ভুয়া চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতারণা করার অপরাধে কবিরাজ কেছেম উদ্দিনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, নিজের শিশু সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে শিশুটির মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুটির মা ও ভুয়া কবিরাজকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সান নিউজ/এফএআর