নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী: প্রতিবছর কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন উপজেলায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আবেদন সাপেক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়ে থাকেন। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়। আর এসব অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশকিছু নির্দেশনাও জুড়ে দেয়া হয় পশুর হাটে। কিন্তু হাটগুলোতে এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় বসানো হচ্ছে এসব অস্থায়ী পশুর হাট।
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর এবং এবছর কঠোর পরিস্থিতিতে এসকল অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের ইঙ্গিতে এসব নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে বসানো হয়েছে এই পশুর হাট।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই এর ৩৩৩ নং স্মারকের (ক) নির্দেশনায় প্রথমেই বলা হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলারমাঠ, রেল লাইন/সড়ক মহাসড়কের পাশে ও জনগুরুত্বপূর্ণস্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাবেনা। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে ইজারাদারগণ মাস্ক, সাবান, জীবানুমুক্তকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরেজমিনে নরসিংদীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই, নেই অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক, চোখে পড়েনি সাবান কিংবা জীবানুমুক্তকরণ উপকরণ। যারফলে সম্প্রতি নরসিংদীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তাই নয়, নরসিংদীর বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠে ও মহাসড়কের পাশে বসানো হয়েছে পশুর হাট। ফলে খেলোয়াড় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এরমধ্যে অন্যতম মনোহরদীর হাতিরদিয়া ছাদত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাতিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসানো হয় এই পশুর হাট। এছাড়া পলাশ উপজেলায় মন্ত্রী পরিষদের নির্দেশনাকে বেশী অবজ্ঞা করা হয়েছে। পলাশ উপজেলার ৪টি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে একটি ডাংগা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, অপরটি নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী জিআরসি ফুটবল খেলার মাঠ।
এছাড়া চরসিন্দুর বাজারের পশুর হাটটি এবার বসানো হয়েছে চরসিন্দুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কারণে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মাঠের নিয়মিত খেলোয়াড়গণ। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে এই পশুর হাট বসানো হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানো হলে মাঠ নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়া নর্দমায় দীর্ঘদিনের জন্য একটি দুর্গন্ধময় এলাকায় পরিণত হয়ে আশপাশের পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরে। শুধু তাই নয়, মাঠে গর্তকরে বাঁশ ব্যবহার করার ফলে সেই গর্ত পুনরায় ভরাট না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ মানুষজন চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।
অন্যদিকে খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর বিষয়ে কয়েকজন খেলোয়াড় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর ফলে এই সময়ে খেলা বন্ধ থাকে। মাঠটি নর্দমা ও কর্দমাক্ত পরিস্থিতির কারণে মাসের পর মাস খেলার অযোগ্য হয়ে পরে। আর মাঠে গর্তকরে বাঁশ পুতে রাখার কারণে যে গর্তের সৃষ্টি হয় তা পরবর্তীতে
ভরাট না করার কারণে অনেক খেলোয়াড় ও রেফারী পা ভেঙ্গে যাওয়ারও নজির রয়েছে।
এবার জেলায় পশুর হাট বসাতে ১৪ জুলাই বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় জেলার ২৫টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর পলাশ উপজেলা প্রশাসন তড়িগড়ি করে ১৫জুলাই নরসিংদীর একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তাতে বিজ্ঞপ্তি জারির দিনই ১টা পর্যন্ত দরপত্র বিক্রির শেষ সময়, ২টার মধ্যে দাখিল এবং ৩টায় খোলার সময় নির্ধারণ করা হয়।
এবিষয়ে দরপত্র কমিটির মাধ্যমে দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা থাকলেও কোন কিছুই প্রতিপালন করা হয়নি। দরপত্রের নির্বাচিত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের ইজারাকৃত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে একইদিনে ইজারা দেয়ার শর্ত থাকলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি। তড়িগড়ি করে সকল নিয়ম ও নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাজার ইজারা দিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)। পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: আমিনুল ইসলাম জানান, স্কুল ও খেলার মাঠে পশুর হাট বসানো যাবে। তাতে কোনো বাধা নেই। বসানো যাবেনা এমন কোনো নির্দেশনা কোথাও নেই। এছাড়া হাটের দরপত্র ইজারা কার্যক্রম যথারীতি নিয়ম মেনেই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সাননিউজ/ জেআই