নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউন শিথিলের পর থেকেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীবাহী বাস, পশুবাহী ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ফেরি কম থাকায় ঘাট এলাকায় যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রী, চালক, গরুর মালিক ও বেপারিরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘাট এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই ঘাটে পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী গাড়ির প্রচুর চাপ রয়েছে। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে লঞ্চ ও ফেরিযোগে ঘরে ফিরছে মানুষ। মানুষের ভিড়ে ঘাট এলাকায় নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় ৫০০ পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দুটি সারি সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটের ওপর চাপ কমাতে ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড়ে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাককে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এতে করে গোয়ালন্দ মোড় থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ৩০০ অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পাবলিক টয়লেট ও খাবারের হোটেল না থাকায় ট্রাকচালক ও সহকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে ব্যাপারী লিয়াকত হোসেন যাচ্ছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে সকাল ৯টায় এসেছি। ভোর ৫টার সময় এসে ওয়েটস্কেলের লাইনে আটকে পড়ি এবং সকাল ৯টায় ঘাটে আসি। কখন যে ফেরির নাগাল পাব বুঝতে পারছি না। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমে আমাদের গরুগুলোর কি হবে আল্লাহ জানেন। আমাদের ট্রাকগুলো দয়া করে পার করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দিগন্ত পরিবহনের চালক রুবেল হোসেন বলেন, রাত ৩টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে সিরিয়ালে আটকে গেছি। একটু একটু করে সামনের দিকে এগুচ্ছি। এই দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থাকার কারণে যাত্রীরা বিরক্ত ও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। এখনো ফেরিঘাট থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আছি।
এদিকে পাটুরিয়ার ৫ নং ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ সারি রয়েছে। এছাড়াও ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী দুরপাল্লার বাসের সংখ্যা কম থাকলেও রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের সাধারণ যাত্রীদেরও কিছুটা চাপ দেখা গেছে।
ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে যাত্রী পারাপার হতে দেখা গেছে। তবে ঘাট এলাকায় যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্বর বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল। এছাড়া ফেরিতে যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানা প্রবণতাও ছিল লক্ষণীয়। পাটুরিয়া ফেরিঘাট টার্মিনাল, ঢাকাগামী সড়ক মিলে সাত শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি নৌপথ পারাপারে অপেক্ষায় রয়েছে।
ফরিদপুরগামী প্রাইভেটকারের চালক দুলাল মিয়া বলেন, ‘পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় সব সময়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভেবেছিলাম সকালের দিকে ঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকবে। কিন্তু ঘাটে দেখি ছোট গাড়ির দীর্ঘ সারি। এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এখনও পার হতে পারিনি।’
কুষ্টিয়াগামী আব্দুল জলিল বলেন, ‘ঈদের কয়েক দিন আগেই গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। লকডাউনের সময় ব্যবসা বন্ধ ছিল। এখন শিথিল করছে তবে ব্যবসার অবস্থা মন্দা। ঢাকায় থাকলে খরচ বেশি। তাই পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই আগেই রওনা হয়েছি। তবে ঘাট এলাকায় প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ফেরির অপেক্ষায় আছি।’
ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে সরকার লকডাউন শিথিল কারায় এ ঘাট হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যানবাহন ও যাত্রীরা গ্রামে বাড়ি যাচ্ছেন। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি বহরে চলাচল করছে ছোট-বড় মিলে ১৬টি ফেরি। গত ঈদে এ রুটে অন্তত ২০টি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করেছে। এ অবস্থায় হঠাৎ করে যাত্রী ও যানবাহন সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘাট এলাকার মহাসড়কে দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভোগ। প্রচণ্ড রোদ ও ভ্যাপসা গরমে আটকে পড়া যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি ট্রাকে থাকা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিক ও ব্যাপারীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনার বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়ছে। গত দুদিনের তুলনায় আজ সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চল জেলার যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরি চলাচল করায় যানবাহন ও যাত্রীদের পারাপারে সমস্যা হবে না। আমরা সব সময়ই ঘাট এলাকায় আগত সব যানবাহন ও যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের চেষ্টা করছি। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঘাট এলাকায় কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস, শতাধিক ছোট গাড়ি ও সাত শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক নৌপথ পারাপারের অপেক্ষমাণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, ঘাট সংকট ও ফেরি সংখ্যা কম থাকায় ঘাটে চাপ বেড়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘাটে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। তবে পশুবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ছোট বড় মিলে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদের আগে আরও একটি ফেরি এই রুটে যুক্ত হবে।
সাননিউজ/এমএইচ