নিজস্ব প্রতিনিধি,পটুয়াখালী: শেখের বেটি হাসনিা দিছে ঘর, আমিও টাহা দিছি। হ্যার পরও ঘরের দেওয়াল ফাইট্টা গেছে, এখন এই ঘরে ঘুমামু ক্যামনে; টাহাও দিছি এখন জীবন ও দিমু ! কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন জেলার বাউফল উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ইসমাইল পাদা(৬৫)। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে এ ঘরগুলো দেয়া হয়েছিল ।
সরেজমিনে কথা হয় উপকারভোগীরা জানান, নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় সপ্তাহ যেতে না যেতেই দেয়াল ফেটে যায় ঘর গুলোর। আবার আর্থিকভাবে সচ্ছল অধিকাংশ পরিবারের মাঝেও বিতরণ করা হয়েছে এই ঘর। প্রতিটি ঘর পেতে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে খরচ করতে হয়েছে ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাউফলের ১০০ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘরই আবার দেয়া হয় নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে। অভিযোগ রয়েছে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ ও সাবেক চিপ হুইপ আসম ফিরোজের ভাইয়ের ছেলে হওয়ায় এখানেই ঘর বেশী বরাদ্দ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে রফিক মৃধাকে ঘর দেয়া হয়েছে। অথচ তার বাউফল পৌরশহরের হাসপাতালের পেছনে ও নাজিরপুরে পৃথক নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন চন্দ্রদ্বীপে জমি ক্রয় করে বসবাস করছেন। তাকে ভূমিহীন দেখিয়ে ঘর দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তার স্ত্রী জানান আমার স্বামী এখানে কৃষি কাজ করে। আমরা একটি ঘর পেয়েছি। এই ঘরের ইট, বালু, সিমেন্ট পরিবহনের জন্য আমাকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। এছাড়াও ঘরের নির্মাণ শ্রমিকদের ১০ দিন খাওয়াতে হয়েছে।
একই ওয়ার্ডের আলাল খলিফা জানান, ঘর পেতে তাদের প্রত্যেকের ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১ নং ওয়ার্ডের বাবুল মৃধার রয়েছে মহিষের খামার। তিনি সচ্ছল হওয়ায় তার ছেলে আলম মৃধার নামে একটি ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। একই ওয়ার্ডের ইসমাইল প্যাদা(৬৫) জানান, তার ঘরটি নির্মাণের সপ্তাহ পার না হতেই দেয়ালে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘর তৈরিতে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
তিনি আরও অভিযোগ করেন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে নদীর তীরে ইট, বালু ও সিমেন্ট রেখে যায় সরবরাহকারীরা। সেখান থেকে নির্মাণ সামগ্রীগুলো আনার জন্য পরিবহন খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা।
এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিকদের খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে আরও ৪-৫ হাজার টাকা। ৩ নং ওয়ার্ডে একই পরিবারের নাজমা বেগম, সাইফুল গাজী ও হাসান বয়াতিকে ঘর দেয়া হয়েছে। হাসান বয়াতির স্ত্রী মুক্তা (৪০) বলেন, নির্মাণের পর তার ঘরের দেয়ালে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডের সামসুল হক ঢালীর ঘর আছে অথচ তিনিও পেয়েছেন উপহারের ঘর।
সামসুল হকের স্ত্রী জাকিয়া বেগম বলেন, প্রথমে ৫০০০ টাকা দিয়েছেন ঘর পাওয়ার জন্য। এছাড়া উপকরণ পরিবহনে ৯০০০, ভূমিহীন হিসেবে খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে আরো ১৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। একই ওয়ার্ডের মজিবর রহমান পরিবার নিয়ে থাকেন বাউফল পৌরশহরে। তিনি বাউফলে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পৈত্রিক সম্পত্তিতে ভাইয়ের পাকা ভবনের পাশেই তুলেছেন ভূমিহীন হিসেবে পাওয়া ঘর।
এ বিষয়ে বাউফলের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব কুমার বিশ্বাসের ফোনে একাধীকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নতুন ঘর নির্মাণ করায় ২/১টি ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর দুর্গম এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী পৌছাতে সুবিধাভোগীদের সামান্য পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া ঘর নির্মাণে কোন অনিয়ম হয়নি। ঘর পেতে টাকা দিতে হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলে দাবী করেন তিনি।
সাননিউজ/ জেআই