চাঁদপুর প্রতিনিধি:
এ যেন কঠিন এক বাস্তবতায় থমকে আছে মায়ার বাঁধন। ছোট্ট কোমলমতি পা দুটি উঁচু করে, নরম তুলতুলে হাত দিয়ে শক্ত করে জানালার গ্রিল ধরে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে মাকে দেখার প্রানান্তর চেষ্টা। মা মা বলে ডাকলেও সাড়া দিচ্ছেন না মা।
মায়ের সাড়া না পেয়ে, চিৎকার, চেঁচামেচি তারপর কাঁন্না। এমনই এক হৃদয় বিদারক চিত্রকে সামলাতে হচ্ছে মা ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়াকে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। আর এজন্য নিজের সন্তানের এই আবেদনেও জড়িয়ে আদর করতে পারছেন না তিনি।
সারাদিন বাচ্চাটি কেবল মাকে ডাকছে। মায়ের কাছে যেতে চাওয়া ছাড়া আর একটি কথাও বলে না। অথচ মা পাশের কক্ষে থেকেও একবার কোলে তুলে নিতে পাড়ছেন না অবুঝ শিশুটিকে। ছেলের কান্নাকে উপেক্ষা করে ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকার যন্ত্রণা কেবল সেই মা বলতে পারেন!
ভবনের একটি কক্ষে বসে নীরবে কাঁদছেন। কারণ তিনি করোনা পজিটিভ। তাই শিশু সন্তান দ্বিজরাজসহ পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা রয়েছেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়ার দৈনিক জীবনযাপনের গল্প এখন এটি।
তিনি করোনা ঠেকাতে, প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিতকরণে ত্রাণ বিতরণ, কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সম্মুখভাগের যোদ্ধা হয়ে মাঠ প্রশাসনে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সতর্ক থাকলেও সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়নি তার।
গত ২৯ এপ্রিল ইউএনও’র করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন। এরপর থেকেই তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এর আগে ২৭ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা করান তিনি। তবে কোনো উপসর্গ না থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, সেই কৌতুহলবশত নমুনা পরীক্ষা করান।
এদিকে সরকারি বাসভবনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা থাকতে হয় ইউএনওকে। কিন্তু তার একমাত্র শিশু সন্তান কি বোঝে হোম কোয়ারেন্টাইন কি?
সারাক্ষণ মা মা বলে চিৎকার-চেঁচামেচি, তারপর কাঁদতে থাকা। তাকে কে বোঝাবে, কতটা ভালোবাসা নিয়ে তার মা দরজা বন্ধ করে বসে আছেন।
সান নিউজ/সালি