নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর : বাহাদুর ও ভদ্র। দুইটি গরুর আলাদা আলাদা নাম। এবার ঈদুল আজহায় রংপুরে সবচেয়ে বড় গরু হিসেবে দাবি করা হচ্ছে তাদের। ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরু দুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গরু ছাড়েনি খামারিরা।
দেশিয় খাবার আর পরম যত্নে বাহাদুরকে লালন-পালন করেছেন জেলার কাউনিয়া উপজেলার শিবু মালিপাড়া গ্রামের খামারি নজরুল ইসলাম। প্রায় ৪০ মণ ওজনের এ গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার তালুক হাবু এলাকার খামারি রওশন তার গরুর নাম রেখেছেন ‘ভদ্র’।
ঈদকে ঘিরে ‘ভদ্র’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি গরু লালন-পালন করেছেন এই খামারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গরুই বিক্রি করতে না পারায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
রওশন জানান, ভদ্রকে প্রতিদিন খড়, ভুসি, গম, ভুট্টা ও ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে। ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুর ওজন প্রায় ৩৫ মণ। তিনি এর মূল্য হাঁকিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা বাড়িতে এসে ‘ভদ্র’কে দেখে গেছেন। দাম এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ওপরে উঠেছে। আরও দামের আশায় তিনি বিক্রি করেননি।
এদিকে কাউনিয়ার খামারি নজরুল ইসলাম জানান, চলমান লকডাউনে বাহাদুরকে নিয়ে তিনি চিন্তিত। এতোদিন কোরবানির পশুর হাট চালু থাকলে বাহাদুরের দর কষাকষি হতো। কিন্তু হাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। অনেকেই এসে বাহাদুরকে দেখে সন্তুষ্ট ও খুশি হয়েছেন। কিন্তু দামের বেলায় তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি কেউ। তিনি বাহাদুরকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা করছেন।
তিনি জানান, বেশ স্বাস্থ্যবান, চতুর আর রাগ বেশি হওয়ায় গরুটির নাম বাহাদুর। লালন-পালনে অনেক খরচ হয়েছে। সাদা ও কালো রঙের সংমিশ্রণ রয়েছে গরুটির চামড়ায়। দেখতেও খুবই সুন্দর। বিশাল দেহের গরুটি দেখতে প্রতিদিন আশপাশের মানুষ ভিড় করছে। অনেকেই ফেসবুকে ছবি দেখে ফোনও করছে। কিন্তু কারো সঙ্গে দামে মিলছে না।
জেলার পীরগঞ্জের পাঁচগাছি ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রামের মায়ের দোয়া খামারেরও অবিক্রিত রয়েছে রাজা-বাদশা। দেখতে বৃহৎ এ গরু দুটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮ লাখ (২৫ মণ) এবং ৬ লাখ (২২ মণ) টাকা। কিন্তু সর্বাত্মক লকডাউনের প্রভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতাই আসেননি ওই খামারে। এখন পুঁজি উঠা নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তার।
জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও শংকরসহ দেশি জাতের গরু পালন করেছে রংপুরের খামারিরা। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। হাট না বসলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
লকডাউন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পশুর দাম কমতে শুরু করেছে। যদি পশুর হাট না বসে তাহলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে না। এতে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিতে পড়তে হবে।
রংপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, গত বছরও কোরবানির সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়েছিল। পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলো না। এবারও একই পরিস্থিতি। এ কারণে গত বছরের মতো এবারও অনলাইনে পশু বেচাকেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য খোলা হয়েছে ‘অনলাইন কোরবানির পশুরহাট’ নামে একটি ফেসবুক আইডি।
তিনি আরও জানান, গত বছর হাট ও অনলাইন মিলে তিন কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকার গরু-ছাগল বেচাকেনা করা হয়েছে। এবারও অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে। এতে খামার মালিকরা ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এবারও চাহিদার তুলনায় রংপুর জেলায় দেড় লাখেরও বেশি পশু রয়েছে। ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য জেলার ছোট-বড় মিলে তিন লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ ৪৬ হাজার ২৭০টি গরু, মহিষ ও ষাঁড় রয়েছে। এ ছাড়া এক লাখ ৫০ হজার ৫২৭টি ভেড়া ও ছাগল আছে।
সাননিউজ/এমএইচ