নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সময়ে নমুনা সংগ্রহাগার ও পরীক্ষাগারে জনবল কম থাকায় করোনা পরীক্ষায় ভোগান্তি ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
শুক্রবার (৯ জুলাই) সকাল ১০ টায় আধুনিক সদর হাসপাতালে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষাগারে লোক রয়েছেন সরকারি ২ জন এবং স্বেচ্ছাসেবক ৪জন।ওই ৬ জনই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ৩ জন করোনা পজিটিভ হওয়ায় ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এ অবস্থায় একজন লোক দিনে ৭০-৮০ জন রোগীর করোনার নমুনা করেন। কিন্তু এখানে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রত্যহ কমপক্ষে শতাধিক রোগী হাজির হচ্ছেন। শুধুমাত্র জনবল সংকটের কারণে পরীক্ষা করতে আসা সকল রোগীকে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র জটিল রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করেন। অন্যদের ১/২দিন পরে আসার পরামর্শ দেন।
সদর হাসপাতালের কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ‘বেলা ১০টায় এসেছি। আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টোকেন নিয়েছি। এরপর ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করাতে আসি। এখন তারা কাল আসতে বলেছে। বিষয়টি আমাদের জন্য অনেক ভোগান্তির।’
ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ‘কাল এসে ফিরে গেছি। আজও ফিরে যেতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে আসতেই আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। সম্ভব নয়। যাই হবে হোক। আমি আর পরীক্ষা করাতে আসবো না।’
দেশের উত্তর সীমান্তের ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেই মোতাবেক বাড়ছে করোনা পরীক্ষার চাপ। এ চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
ওই গ্রামের আব্দুল লতিফ নামে একজন বলেন, করোনা পরীক্ষা না করে এভাবে যদি রোগীদের ফেরত দেয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। এমনটা হলে ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য সামনে অনেক ভয়ঙ্কর একটি সময় অপেক্ষা করছে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুন মাসে বেড়েছে ১৫ গুণ। ঠাকুরগাঁও জেলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ জন।
শুরু থেকে মৃত ১০৪ জনের মধ্যে জুন মাসেই মারা গেছেন ৪৭ জন। করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু—এ দুই সূচকেই জুন মাস করোনা পরিস্থিতির বিগত ১৪ মাসকে ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় সঠিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা না গেলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.নাজিরুল আজিজ চপল বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় দিন দিন করোনা রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে জনবল সঙ্কট রয়েছে। সে কারণে সঠিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না।সেখানে কর্মরত ৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ৩জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কাজে একটু বিভ্রাট সৃষ্টি হয়। তবে ইতোমধ্যে নতুন লোক দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে শতাধিক রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
সাননিউজ/ এসএ