নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী তিন বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হলেন অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ্।
গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক এবিএম আব্দুল হান্নানের স্বাক্ষরে বলা হয় হেমাটোলিজি বিভাগের বর্তমান আগামী শনিবার তার শেষ কর্ম দিবস পালন করবেন। আগামী ১১ জুলাই রোববার থেকে অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ্ দায়িত্ব বুঝে নেবেন।
অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ্ ১৯৯১ সালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। এরপর তিনি হেমাটোলজি বিষয়ে উচ্চতর এফসিপিএস ডিগ্রি সফলতার সাথে অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ থেকে এমসিপিএস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশ হেমাটোলজির সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মো: সালাহ্উদ্দীন শাহ্ রাজশাহী বোর্ডের অধীনে চিরিরবন্দর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০০০ সালে কর্ম জীবনের শুরুতে তিনি তৎকালীন বগুড়া মেডিকেল কলেজে কিউরেটর প্যাথলজি পদে নিযুক্ত হয়ে সরকারি চাকুরী শুরু করেন।
এরপর তিনি ২০০৫ সালে পিএসসির নিয়োগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সহকারি অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে একই সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেলে তিনি সরকারি চাকুরী ছেড়ে বিএসএমএমইউতে হেমাটোলজি বিভাগে যোগদান করেন। একই বিভাগে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও ২০২০ সালের আগস্টে হেমাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পান।
তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার চ্যাপেল হিল থেকে কোগুলেশন ডিজঅর্ডারের উপর ‘ইন্টারন্যাশনাল হিমোফিলিয়া ট্রেনিং সেন্টার ফেলোশিপ’ সম্পন্ন করেন। তিনি বনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং স্টেম সেলের উপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যার মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি বনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ও স্টেম সেলের উপর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন। তিনি ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমেরিকান সোসাইটি অব হেমাটোলজি’ কর্তৃক ভিজিটর ট্রেইনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে ফ্লোসাইটোমেট্রি, হেমাটোপ্যাথোলজি, মলিকুলার মেথডোলজিস এবং ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রির উপর প্রশিক্ষণ নেন। তাঁর দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দেশে হেমাটোলজি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক কনফারেন্সগুলোতে অংশগ্রহণ করে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
তিনি সহকারি অধ্যাপক থাকা অবস্থায় নিজস্ব প্রচেষ্টায় এবং তৎকালীন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচটিসি ক্লিনিক চালু করেন এবং তিনি এই ক্লিনিকের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যা এখন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এখানে ওয়ার্ল্ড ব্লিডিং ডিজ্অর্ডার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনটি তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মাসুদা বেগমের তত্ত্ববধানে এবং টিমের অন্যান্য সাথে তিনি সফলতার সাথে বনম্যারো প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সালাহ্উদ্দীন শাহ্ পেশাগত জীবনে সফলতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের সকল হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন হেমাটোলজী সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি হেমাটোলজী সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক কনফারেন্সর আয়োজন করেন এবং সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।
তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন আমেরিকার সোসাইটি অব হেমাটোলজি, বৃটিশ সোসাইটি ফর হেমাটোলজি, ইউরোপিয়ান হেমাটলজি অ্যাসোসিয়েশন, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনসহ অনেক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করে যাচ্ছেন।
অত্যন্ত মেধাবী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ্ পেশাগত জীবনে সফলতার পাশাপাশি তিনি রক্তরোগীদের জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে রক্তরোগীদের স্বল্প খরচে অলাভজনকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য কাজ করছেন। তিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনাল, অলাভজনক ফাউন্ডেশন এবং কল্যাণ সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটার্ড ওয়ান স্টপ হেমাটোলিজি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি তিনি বিএসএমএমইউ এর হেমাটোলজি বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বনম্যারু ট্রান্সপ্লানটেশন চালুর ব্যাপারে তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সাননিউজ/এএমএম