নিজস্ব প্রতিবেদক : হত্যা মামলার নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে বরিশালের তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনের নামে মামলা।
সোমবার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে নয়টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. শাহজাহান হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রোববার ৪ জুলাই ওই নারী আসামি বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবু জাফর মো. রহমাতুল্লাহ, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল হোসেনসহ ছয়জনের নামে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মামলার পর সোমবার দুপুরে ওসি জিয়াউল আহসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল হোসেনকে উজিরপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের আদেশ দেন- বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৬ জুন (শনিবার) বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী টুনু (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বরুণ চক্রবর্তী ওইদিনই একই গ্রামের মিনতি অধিকারী (৩৫) নামের এক নারীর বিরুদ্ধে উজিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে মিনতি অধিকারীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দের পর পাঁচদিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালতের বিচারক মাহফুজুর রহমান গত ৩০ জুন (বুধবার) রিমান্ড শুনানি শেষে তার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে শুক্রবার (২ জুলাই) মিনতি অধিকারীকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিনতি অধিকারী। পরে আদালত তাকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মিনতি অধিকারীকে মারধর করা হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন আদালত। হাসপাতালের পরিচালক রোববার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর আদালত মিনতি অধিকারীর দেয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
নিহত বাসুদেব চক্রবর্তী টুনু চক্রবর্তী উজিরপুর উপজেলার হারতা বাজার সংলগ্ন এলাকার মৃত নারায়ণ চক্রবর্তীর ছেলে। তিনি হারতা বাজারে একটি কাউন্টারে কমিশনে লোকাল বাসের টিকিট বিক্রির করতেন। টুনু চক্রবর্তী বিবাহিত ছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে।
অন্যদিকে মিনতি অধিকারী একই ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের মৃত শিবু ভাংরার মেয়ে। তার দুইবার বিয়ে হয়। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মিনতির প্রথম স্বামীর ঘরে এক ছেলে ও মেয়ে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে এক ছেলেসন্তান রয়েছে। মিনতি জামবাড়ি গ্রামে বাবার বাড়ির পাশে প্রতিবেশী কালাম সরদারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
মিনতি অধিকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মজিবর রহমান জানান, মিনতি অধিকারীকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ শারীরিক নির্যাতন করেছে। তার শরীরে কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনা লিখিতভাবে জানালে আদালত মিনতি অধিকারীর শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, ওই নারীর অভিযোগটি আদালতের মাধ্যমে পুলিশ সুপার কার্যালয় ও উজিরপুর থানায় পাঠানো হয়। এরপর (সেই অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে-বরিশালে রিমান্ডে নারী আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি)। পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তে স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে ওসি জিয়াউল আহসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল হোসেনকে উজিরপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সান নিউজ/ এসএ