চট্টগ্রাম ব্যূরো :
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের বদলে তিন বছর জেলে থাকা সেই মিনু আক্তার আর নেই। কারামুক্তির ১২ দিন পর সড়কে মৃত্যু ঘটে তার। মৃত্যুর পর অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তার লাশ দাফন করেছে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।
শনিবার রাতে তার পরিচয় পেয়ে রবিবার সকালে এ তথ্য প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান, গত ২৮ জুন নগরীর বায়েজীদ সড়কে গাড়ির ধাক্কায় ওই নারীর মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হলেও ঘটনা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়। মৃত্যুর পর তার পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ দাফন করে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।
ওসি আরও বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আমাদের পুলিশ টিম তার পরিচয়ের সন্ধানে নামেন। শনিবার রাতে সীতাকুন্ড এলাকায় কয়েকজনকে ওই নারীর ছবি দেখালে তারা মিনুর ভাই মো. রুবেলের কথা বলেন। পরে রুবেল ছবিটি দেখে তার বোন মিনু বলে শনাক্ত করেন।
এর আগে গত ১৬ জুন বিকেল ৪টা দিকে বিনা দোষে ৩ বছর জেলে থাকার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার। ওইদিন বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন।
আদালতের তথ্যানুযায়ী, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবী নামের এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা করা হয়।
ওই মামলায় কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নামের এক নারী গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুম আক্তার জামিন পান। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কুলসুমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।
রায়ের দিন আসামি কুলসুম অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনু নামের এক নারীকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার সাজিয়ে আত্নসমর্পণ করানো হয়। তখন আদালত মিনুকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল কুলসুম আক্তার হাইকোর্টে আপিল করেন। সেই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন। চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি আবেদন করেন।
ওই আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে পাঠানো আসামি প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার নন। এ আবেদনের শুনানি শেষে আদালত কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেয়। তখন তিনি জানান, তিনি কুলসুম নন, তার নাম মিনু আক্তার। মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে আদালতে আনেন। আদালত তাকে জেলে দেন। প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে তিনি চেনেন না।
আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামি কুলসুমী ও সাজা ভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি উপনথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঠিয়ে দেয়। পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
সান নিউজ/আইকে