নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাঠের ফসল পেকে গেছে। দ্রুত এ ফসল কেটে আনতে হবে। কিন্তু করোনায় শ্রমিক সংকটের কারণে নাটোরের চলনবিল, মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিল হবিগঞ্জের হওড় এলাকা এবং ময়সনসিংহসহ সারাদেশে বোর ধান চাষিরা পড়েছে মহাসংকটে। তবে সেই সংকট কেটে গেছে। প্রশাসনের সহয়তায় অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিক এনে এবং আধুনিক মেশিনের সাহায্য কটা হচ্ছে পাকা ধান।
মাঠে মাঠে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে মহাব্যবস্তা কৃষক। কেউ ধান কেটে আনছে তো কেউ মাড়াই করছে। বর্ষার পূর্বেই ঘরে তুলতে হবে ধান। তাই দম ফেলার ফরসত নেই কৃষকের।
তবে ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলো দেশের সবচে বড় নাটোরের চলনবিলের বোরো চাষিরা। একদিকে ঝড় বৃষ্টি অন্যদিকে করোনায় লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট। কিভাবে ঘরে তুলবে ধান তা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় ছিলো তারা। এ সংকট সমাধানে এগিয়ে আসে জেলা পুলিশ। বিলের ধান কাটা জন্য অন্য স্থান থেকে আনা হলো ১৩শ শ্রমিক।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলনবিলের ধান কাটার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ১৩শ খুবি কম। তবুও এই সংকটের সময় পুলিশ শ্রমিকের ব্যবস্থা করে দেয়া জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ। কিছুটা হরেও শ্রমিক সংকট দূর হয়েছে। ধান কাটতে কিছুদিন বেশি সময় লাগলেও কৃষকরা আশাবাদী বর্ষার আগেই শেষ হবে কাটা ও মাড়াই।
জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার শাহা জানান, ধান কাটার জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে দুপুরের খাবার সরবরাহ করছে পুলিশ। ধান কাটা শেষে সবাইকে নিজনিজ গ্রামে ফিয়ের যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
১৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াই। একটু দেরি হলেই বিলের নিম্নাঞ্চলে উঠবে পানি। নষ্ট হবে জমির ফলস। তই সময়মতো ধান কাটা নিযে দুশ্চিন্তায় ছিলো কৃষক।
করোনার কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকা প্রধান সমস্য ছিলো কৃষি শ্রমিকের। প্রশাসনের সহায়তায় ফরিদপুর ও শরীয়তপুর থেকে শ্রমিক আনায় সেই দুশ্চিন্তা কাটে কৃষকরে।
কৃষকরা জানান, শ্রমিক সংকট দূর হওয়ায় উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে ধান কাটা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মত রহিমা আক্তার জানান, আড়িয়ল বিলের কৃষকের যাতে একটি ধানও নষ্ট না হয়, সে জন্য কাজ করছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ধান কাটার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হচ্ছে। অন্য জেলা থেকে শ্রমিক এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদা বলেন, করোনার কারণে শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ধান কাটার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। দূরত্ব মেনেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে আড়িয়ল বিলের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর অংশেই উৎপাদন হবে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিকটন ধান। এবার ফলন ভালো হওয়ায় আরও বেশি উৎপাদন আশা করছেন কৃষকরা।
হবিগঞ্জের হাওর এলাকায় পুরোদম চলছে ধানকাটা ও মাড়াই। বন্যার পূর্বাভাস থাকা দ্রুত হওড়ের ধন কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. তমিজউদ্দিন খান জানান, দ্রুত হওরের ধান কাটার জন্য ১৯টি কম্বাইন্ড হারবেস্ট মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, কম্বাইন্ড হারবেস্ট মেশিন সরবরাহ করায় আমাদের বেশ উপকার হয়েছে। কম শ্রমিকে দ্রুত সময়ে অধিক পরিমাণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। যে পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়েছে তারজন্য আরও মেশিন ও শ্রমিক প্রয়োজন বলে জানান কৃষকরা।
কৃষকরা আরও জানান, বাজারে ধানের দাম কম। ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা মন। ধান কাটার প্রথম দিকে ছিলো ৭শ টাকার ওপরে। ধান যত মাড়াই হচ্ছে দাম তত কমছে। এতে লোকসানের মুখে পরবে কৃষক।
ধানের জেলা ময়মনসিংহে একার ২ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সেখানেও রয়েছে শ্রমিক সংকট। জেলায় শ্রমিক সংকটে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় কৃষক ও ছাত্রলীগ। অনেক স্থানে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে কৃষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।