নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : আর কত মায়ের বুক খালি হলে নরসিংদীর চরাঞ্চলের টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ হবে এমন প্রশ্ন এখন নরসিংদীর আপামর জনতার। এই চরাঞ্চলের টেঁটাযুদ্ধে প্রতিমাসেই কোনো না কোনো মায়ের বুক খালি হচ্ছে। ঘরবাড়ি হারা হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এলাকা ছাড়া হচ্ছে শত শত পরিবার। এই অবস্থায় আইন শৃংখলা বাহিনী চরাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রাণপণে চেষ্টা করেও স্থায়ী কোনো ফলাফল আসছে না।
চরাঞ্চলের বিশাল অংশ নদীবেষ্টিত আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেই টেঁটাযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এই টেঁটাযুদ্ধ বন্ধে এলাকার কিছু শান্তিপ্রিয় মানুষ মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও সভা-সমাবেশ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত ক্ষমতার প্রভাব, গোষ্ঠিগত প্রভাব, জয়ী আর পরাজিত দলের ব্যক্তিত্বের লড়াই ও টুকটাক বিষয়কে কেন্দ্র করেই এই চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধ নামক মরণযুদ্ধটি হয়ে থাকে।
তবে জনশ্রুতি রয়েছে এসব গ্রুপকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল থেকে উস্কে দেয়া হয়। যার ফলে সাহসী ভূমিকায় নেমে পড়ে এই মরণ যুদ্ধে। তবে এই টেঁটাযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকা থেকে লোকভাড়া করেও আনা হয় বলে জানান এলাকাবাসী। তাই এ বিষয়ে অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন সরকার ইচ্ছে করলেই পারে। যেমন করে পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তেমনি এই রায়পুরায় টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে দাবি জানান নরসিংদীবাসী।
গত মাসেও এই চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধে প্রাণ গেছে চারজনের। এছাড়া এই টেঁটাযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ছনিয়া, আফছানার মতো বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী, একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, নিরীহ জনগণ আহত হয়েছেন। তবুও টনক নড়েনি প্রশাসনের। বন্ধ হয়নি এই টেঁটাযুদ্ধ।
টেঁটাযুদ্ধের কারণে নরসিংদী জেলাকে দেশে দেশের বাইরে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় বলে জানান সচেতন মহল। তাই এই বিষয়টির দ্রুত সুরাহা চান তারা। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিষ্পত্তি, পালিয়ে থাকা লোকদের বাড়ি ফিরিয়ে আনাসহ প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়। কারণ তাদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনের। এই টেঁটাযুদ্ধ এখন তাদের নেশায় পরিণত হয়ে গেছে। একপক্ষের দাবি হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত নয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এসব হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউপির কাচারিকান্দী গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রায় ২০টি বসতঘর ভাংচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে আফসানা আক্তার নামে এক তরুণীকে। নিহত আফসানা একই গ্রামের নান্নু মিয়ার মেয়ে ও একটি পক্ষের সমর্থক ছিলো।
সান নিউজ/এসএম