নিজস্ব প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল : সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়ার) আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম পরিচয় দিয়ে করতেন বিভিন্ন দফতরের করতেন নানা তদবির। আর তাতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও হতেন বিভ্রান্ত।
বুধবার (২৩ জুন) সকালে ঢাকার ফকিরাপুল থেকে জহির উদ্দিন বাবুল ও ময়মনসিংহের সেনবাড়ি এলাকা থেকে গুলশান আরা খানমকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকার হোটেল সেল্টারে তিন বছর ধরে অবস্থান করে এভাবেই প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন জহির উদ্দিন বাবুল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। এবার ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তদবির করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন কথিত এই এমপি।
তাকে আটকের পর তার সহযোগী ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি এলাকার গুলশান আরা খানমকে (৪৫) আটক করা হয়েছে। তিনি চাকরির প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও খালি চেক নেওয়ার পর তাতে টাকার অঙ্ক বসিয়ে টাকা উদ্ধারের জন্য অভিযোগ নিয়ে যেতেন বিভিন্ন দফতরে।
জহির উদ্দিন বাবুল (৫৫) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর গ্রামের প্রয়াত ডা. মাহতাব উদ্দিন আহাম্মদের ছেলে।
বুধবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে প্রতারক শুলশান আরা খানম মাঠপর্যায়ে সহজ-সরল নারীদের ফাঁদে ফেলে তাদের আত্মীয়স্বজন ও ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ওই কথিত এমপির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এতে সাধারণ মানুষ চাকরির আশায় শুলশান আরা খানমকে টাকার অঙ্ক ছাড়াই চেক প্রদান করে। পরে গুলশান আরা চেকে ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে উত্তোলনের জন্য সরকারি বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেন। আর মো. জহির উদ্দিন বাবুল এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদবির করতেন। শাহ কামাল আকন্দ, (ওসি)
ডিবির এই ওসি জানান, এ চক্রটি ছয়জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮টি চেকে বসানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার অঙ্ক।
প্রতারণার শিকার আফরোজা আক্তার ডালিয়া বলেন, গুলশান আরা খানমের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তার বাউন্ডারি রোডের বাসায় যাতায়াত ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাসুরের ছেলে ও মেয়েকে সেনাবাহিনীর সিভিলে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। তানভীর ইমাম এমপি তার খালাতো ভাই বলেছিল। আমরাও তখন তাকে বিশ্বাস করি এবং ১৭ লাখ টাকার চুক্তি করি।
আফরোজা বলেন, তার কথামতো ৬ লাখ টাকা নগদ এবং ৫টি চেক নেয় সে। কিন্তু চাকরি ও টাকা ফেরত না দিয়ে ব্ল্যাংক চেকে ২০ লাখ টাকা বসিয়ে উকিল নোটিশ পাঠায় ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। পুলিশ সেটি তদন্ত করতে গিয়ে চক্রটিকে আটক করেছে। আমরা টাকা ফেরত ও জড়িতদের শাস্তি চাই।
জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, এই প্রতারক গ্রুপটি মূলত নারীদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন দেখি তাদের কাছ থেকে চেক নেয়। পরে সেটি তাদের পাওনা টাকা বলে দাবি করে এবং না দিলে পুলিশের সহযোগিতা চায়।
এসপি বলেন, প্রতারক বাবুল আমাদের কাছে এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদবির করায় সন্দেহ হয়। পরে আমরা অনুসন্ধান করি। অনুসন্ধানের তিনি ভুয়া নিশ্চিত হলে তাকে আটক করে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই কাজ করে আসছেন।
সাননিউজ/ জেআই