নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার : করোনার কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় অনেকটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রাণীদের ওপর। সকালে রাস্তা দিয়ে আসার সময় মায়া হরিণের ডাক শোনা যায়। আগে সচরাচর এমন ডাক শোনা যেত না। পর্যটক না থাকার কারণে বনের স্বাভাবিক পরিবেশে বন্যপ্রাণির এমন স্বস্তি দেখা দিয়েছে। লাউয়াছড়ায় এসে এমন বাস্তবতা উপলব্ধি করে এ কথা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আজিজ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এ বছরে সমৃদ্ধ হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে উদ্যানটি। ফলে মানুষের উৎপাত নেই। আর এই সময়ে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এখন উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কলরব, বনমোরগের ডাক শোনারও সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যাচ্ছে, লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রজাতির হুল্লুকসহ গর্ভবতী বিভিন্ন প্রাণী ও বাচ্চাদের নিয়ে গাছে গাছে লাফালাফি করছে, প্রাণীরা খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দশকে এই বনের গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। প্রাচীন গাছগাছালি চুরি, মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেল ও সড়কপথে যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্ন, অত্যধিক দর্শনার্থীর হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব মিলিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল বন ও বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াংরা জানান, এই বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় থাকতো। উদ্যান বন্ধ থাকায় বনে দিনের বেলা উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার আরো কয়েক মাসের জন্য উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করলে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ হতো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামরুল ইসলাম বলেন,অপরিকল্পিত পর্যটকের আগমন লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করেন।
সান নিউজ/এসএ