নিজস্ব প্রতিনিধি, কুমিল্লা : শিগগিরই আলোর মুখ দেখছে কুমিল্লার শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, রানীর কুঠি, সতের রত্ন মন্দির ও রানী ময়নামতির বাংলো। এখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর টিকিট চালু করবে। এতে প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ হবে। মানুষের বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান।
কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গ্রন্থের সূত্রমতে, সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণ ১৯০৬ সালের পয়লা অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থায় জন্মগ্রহণ করেন। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের মর্যাদা লাভ করেন তিনি। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করেন। শচীন দেব বর্মণ ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবরে মারা যান।
স্কৃতিক সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লার পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, শচীন দেব বর্মণের বাড়িটি ২০১৭ সালে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। পাহারাদার না থাকায় পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত হচ্ছে।
নাট্য ব্যক্তিত্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, শচীন দেব বর্মণের বাড়ি সংরক্ষণ, রানীর কুঠিতে নগর জাদুঘর স্থাপন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এখানে দ্রুত কার্যক্রম চালুর দাবি করছি।এদিকে কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগর পাড়ে ত্রিপুরা রাজ বংশের নির্মিত বিশ্রামাগার রানীর কুঠি। ঐতিহাসিক রানীর কুঠিটি বর্তমানে ধ্বংসের পথে। বাড়িটি সংস্কার করে এখানে একটি ইতিহাসভিত্তিক জাদুঘর করা যেতে পারে।
প্রবীণ সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ১৯ শতকের প্রথম দিকে রানীর কুঠি নির্মিত হয়। এখানে নগর জাদুঘর করার জন্য স্থানীয় সুধীজন দাবি জানিয়ে আসছেন। ভবনটি সংস্কার করে এখানে নগর জাদুঘর স্থাপন করা যেতে পারে। গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, রানীর কুঠি ত্রিপুরার রাজদরবারের শাসকরা নির্মাণ করেছেন। এর নির্মাণ কৌশল দেখে তা শতাধিক বছরের প্রাচীন বলে ধারণা করা যায়।
এখানে ইতিহাসভিত্তিক একটি জাদুঘর স্থাপন করা যেতে পারে। অপরদিকে সতের রত্ন মন্দির কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন খামার কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত। কারও মতে সতেরটি রত্ন এটিতে স্থান পাওয়ায় নাম দেওয়া হয় সতের রত্ন মন্দির। কেউ মনে করেন, ১৭টি চূড়ার কারণে এর নাম দেওয়া হয় সতের রত্ন মন্দির। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তীর্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত। ৪০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছে সেখানে।
এ ছাড়া রানী ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সাহেবের বাজার এলাকায় অবস্থিত। ১৯৮৮ সাল নাগাদ এর খনন কাজ শুরু হয়। খনন করার সময় এখানে বেশ কিছু পোড়ামাটির ফলক এবং অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করেন এ প্রাসাদটি ৮ম থেকে ১২শ শতকের প্রাচীন কীর্তি।
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, করোনার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, রানীর কুঠি, সতের রত্ন মন্দির ও রানী ময়নামতির বাংলোতে আমরা দ্রুত টিকিট চালু করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেব।
সান নিউজ/এসএম