নাহিদ আল মালেক, বগুড়া: সারাদেশে জেকে বসেছে শীত। কনকনে ঠাণ্ডার সাথে শৈতপ্রবাহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চেলের জনজীবনকে আরও বিপ্রযস্ত হয়ে পড়েছে। এই শীতের প্রভাব পড়েছে বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার শাওইল শীতবস্ত্রের হাটে।
সেখানে সারাবছরই বেচাকেনা হয়। তবে শীতে এলে বাহারি রং আর ডিজাইনের ডিজাইনের চাদর ও কম্বলসহ বাহারী শীতবস্ত্রের পরসা সাজিয়ে বসেন দোওকানীরা। এবার শীত বেশি পড়ায় বেচাকেনাও হচ্ছে ভালো।
স্থানীয়ভাবে শাওইল হাট কম্বলের হাট নামে পরিচিত। আশে পাশের প্রায় ৪০টি গ্রামের থেকে আসে তাঁতের তৈরি কম্বরল ওচাদরসহ বাহারি শীতবস্ত্র। এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এ তাঁতা শিল্পের সাথে জড়িত।
সপ্তাহের দুই দিন রবিবার ও বুধবার ভোর থেকে বিকিকিনি শুরু হয় হাটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ক্রেতারা আগের দিন এসে অবস্থান নেয় হাটের আশে পাশের বিক্রেতাদের বাড়িতে। সকাল ১০টার মধ্যেই চাহিদা মতো পণ্য কিনে ক্রেতারা রওনা দেন গন্তব্যের উদ্দেশে। হাটের হাজারাদাররা জানান, প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কম্বল, চাদর, উলের সুতা বিক্রি হয় সেখানে। হাটকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে শতশত বেকারের।
স্থানীয়রা জানান, আগে এই হাট বসতো জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে। ১৯৭৭ সাল থেকে এ হাট শুরু আদমদিঘী উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের শাওইল গ্রামে।
এই হাটে শীতবস্ত্র বিকিকিনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে সহস্রাধিক উলের সুতা ও ঝুট কাপড় দোকান। এসব দোকান থেকেই সুতা সংগ্রহ করে তাঁতিরা। হাট কেন্দ্র করে জীবীকা নির্বাহ করে আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, জয়পুরহাটর জেলার আক্কেলপুর, নওঁগাসদর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
বিক্রেতা আব্দুল গফুর জানান, শীতার্তদের মাঝে যারা কম্বর বিতরণ করেন (সরকারি অথবা বেসরকারি পর্যায়ে) তাদের অধিকাংশই যানে শাওইল গ্রামের কম্বলের হাটে। প্রতিটি কম্বল ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া শীত মৌসুম এলে কম্বল প্রতি বাড়তি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করেন তারা।
সারদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীতবস্ত্র কিনতে যান ক্রেতারা। কুমিল্লা থেকে কম্বল নিতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, হাটের কম্বরেল মান খুবি ভালো। বাজারে চাহিদা প্র্রচুর। সেখান থেকে পণ্য পরিবহনেও কোন সমস্যা হয় না। তবে হাটের পরিবেশটা আরও উন্নত করার মত দেন তিনি। তাছাড়া সেখানে থাকা ও খাবার মানসম্মত ব্যবস্থা নেই। এসব দিকে নজর দিলে বিকিকিনি আরও বাড়তো বলে জানান তিনি।
আরেক পাইকারি ক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, গতবছর হাটে কম্বল বিক্রি হতো দুইশ থেকে দুই ২০ টাকা জোড়া। এবার বিক্রি হচ্ছে তিনশ থেকে তিনশ ৩৫ টাকা জোড়া।
তাঁত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বাজারে সুতার দাম বেশি, সেই তুলনায় কম্বলের দাম কম। তাই গত বছরের তুলনায় এবার কম্বল ্ও চাদরের দাম কিছুনা বেশি।
নশরত ইউনিয়ন তন্তবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন জানান, শীত মৌসুমে প্রতিহাটে প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকার বিকিকিনি হয়। এই হাট থেকে কম্বল ও চাদর যায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণ প্রায় সব জেলায়। প্রতিদিন কোটি টাকার বিকিকিনি হলেও হাটটির পরিবেশ উন্নয়ন হয়নি। হাট শেড না থাকায় ব্যবসায়ীদের খোলা আকাশের নিচে কেনাকাটা করতে হয়। তবে সাম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা স্থাপন করায় টাকা লেনদেন সহজ হয়েছে।