গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
তালপাতার ঝুপড়ি ঘরে স্বাস্থ্যকর্মীর এ কেমন কোয়ারেন্টাইন? ঘটনাটি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউপির লখন্ডা গ্রামের।
ছয়দিন ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শুকনো পুকুরপাড়েই বসবাস করছেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। এ ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, ওই নারী রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিলে তিনি বাড়ি চলে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই ছুটে আসেন স্থানীয় প্রভাবশালী প্রশান্ত বাড়ৈ। তার নির্দেশে ওই নারীকে বাড়ি থেকে ৪শ’ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরপাড়ে তালপাতার ঝুপড়ি ঘরে রাখে গ্রামবাসী।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আজ এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছি। স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে আমি অনেকের সেবা করেছি। আজ নিজ বাড়িতে এসেও সেবা পাচ্ছি না। মানুষ এত নিষ্ঠুর হতে পারে জানা ছিল না।
কান্নাজনিত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। মেয়ের আয়েই আমাদের সংসার চলে। মেয়েটিকে এভাবে পুকুরপাড়ে ঝুপড়িতে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এখন আমার মেয়ের কিছু হলে দায় কে নেবে?
অভিযুক্ত প্রভাবশালী প্রশান্ত বাড়ৈ বলেন, গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তেই ওই নারীকে পুকুরপাড়ে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি আসার পর তার পরিবার আমাকে বিষয়টি জানায়। আমি তাকে একটি আলাদা ঘরে রাখতে বলছিলাম। কিন্তু, তাকে এভাবে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে, জানা ছিল না।
কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান জানান, ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে বাড়িতে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় কোটালীপাড়ার ইউএনও এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে এভাবে হেনস্থা করা অত্যন্ত অমানবিক। আমাদের জানালে আমরা তার হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতাম। ওই নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তাকে যারা এভাবে হেনস্থা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সান নিউজ/সালি