ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে মারা যাচ্ছে একের পর এক বন্য বানর। বনের প্রাণীগুলো নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে থাকলেও তা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা কার্যত পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করছে বনবিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের খামখেয়ালিপনাই এ দুর্ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী করছেন বনকর্মকর্তারা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) ফুলবাড়ীয়ার সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান সাননিউজকে বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রায় ১৪ একর জায়গাজুড়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রয়েছে। এখানে প্রায় সাড়ে ৩শ বানর অবাধ বিচরণ করে।’
তিনি জানান, ‘কিছুদিন আগে বনের ভেতর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কভারবিহীন উচ্চ ভোল্টেজের লাইন টানা হয় এবং গত ১৫ ডিসেম্বর তার উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ১০টির মতো বানরের শরীর, হাত, পা ও মুখ ঝলসে গেছে। আহত বানরগুলো খেতে না পেরে শুকিয়ে যাচ্ছে। শরীরের ঝলসে যাওয়া অংশে পচন ধরেছে।’
আশরাফুজ্জামান আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের তার টানানোর আগেই বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনদের সতর্ক করা হয়েছিল। আমরা দাবি ছিল, ভূগর্ভস্থ অথবা কভারের বিদ্যুৎ তার টানানোর জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। দ্রুত স্থায়ীভাবে এর সমাধান না করা হলে বনের অন্য প্রাণীগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে আশংকা রয়েছে।’
জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে খোলা তারের পরিবর্তে দ্রুত কভার দেওয়া বিদ্যুৎ লাইন টানার পরামর্শ দিলেও তা র্কাকর হয়নি।
ফুলবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) অনিতা বর্ধন বলেন, ‘বিদ্যুতের তারে ঝলসে কয়েকটি বানর আহত হওয়ার কথা শোনার পরপরই তার মেরামত করা হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।’
বেসরকারী সংস্থা জনউদ্যোগের ময়মনসিংহ শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘আয়োজন করে বন্যপ্রাণী আহত বা নিহত করা দন্ডনীয় অপরাধ। সন্তোষপুরে বানর আহতের বিষয়ে বনকর্মকর্তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’
এলাকাবাসী জানান, ফুলবাড়িয়ায় মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা সন্তোষপুর বনাঞ্চলে এক সময় হরিণ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বাঘডাস, হনুমান, বানর, শিয়াল, সজারো ও খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। বনদস্যুরা গাছ কেটে বন উজাড় করার পাশাপাশি এখন বনের ভেতর দিয়ে কভারবিহীন তারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীগুলো। বানর বংশগতভাবে দলবদ্ধ হয়ে থাকে। একটি বানর বিদ্যুতের তারে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে রক্ষা করতে গিয়ে অন্যরাও বিদ্যুতে ঝলসে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, খাবার সংকটের পাশাপাশি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে বানরগুলো। বানরকে কেন্দ্র করেই আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য। দর্শনার্থীরা দোকান থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দেয় বানরকে। এগুলো না থাকলে আমাদের ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে হবে।
ভিডিও লিংক... https://www.facebook.com/biplob1972/videos/10221825606457259/