চট্টগ্রাম ব্যূরো : আসন্ন বাজেটে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় নির্মাণাধীন বে টার্মিনালের জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) সভাপতি খলিলুর রহমান।
বুধবার (২ জুন) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানান তিনি। ব্ঞিপিএত তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষাসহ আরও ছয় দফা দাবি উল্লেখ করেন।
খলিলুর রহমান বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত তথা সেভেন সিস্টার অঞ্চল থেকে বন্দরের আয় বৃদ্ধির জন্য বে টার্মিনাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের দাবি ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে এই বে টার্মিনালের জন্য যেন বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়।
মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক জরিপ কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স তালিকায় ব্যয়বহুল ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৮তম, যা দেশের রপ্তানি উন্নয়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এর থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনে কাস্টমস কার্যক্রম সহজীকরণ করা, বন্দরের খরচ কমানো এবং শিপিং এজেন্টদের আইন মানতে বাধ্য করা, যার প্রস্তাব আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। আমরা আশাবাদী আসছে বাজেটে বিষয়টির দিক নির্দেশনা থাকবে যার ফলে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমবে। আশা করি দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামনের বাজেটে আমাদের প্রস্তাব গৃহীত হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এবার করপোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। এটা আসলে একটি ভালো উদ্যোগ। করপোরেট ট্যাক্স কমলে ব্যাংক সুদ কমবে এবং সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সঙ্গে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং অনলাইনে কর প্রদান সার্টিফিকেট দেয়ার নিয়ম চালু সময়ের চাহিদা। কর কাঠামো তুলনামূলক বিচারে বিত্তবানদের পক্ষে। সহজতর কর ব্যবস্থাপনা কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক। স্বপ্রণোদিত কর প্রদানের সীমা ৩ লাখের পরিবর্তে ৪ লাখ এবং প্রবীণ করদাতার বেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা করা উচিত। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করদাতাদের বেলায় শিক্ষা খাতে খরচ রেয়াত নেই। বিষয়টি আগামীতে কর রিটার্ন দাখিলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, রপ্তানির জন্য আমদানি করা কাঁচামাল ছাড়া অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর কর অথবা ভ্যাট আরোপ করা আবশ্যক। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে আমদানি করা পণ্যের ভ্যাট অথবা কর কম হওয়ায় স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হন। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার নতুন কৌশল প্রয়োগ করা গেলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। দেশীয় শিল্প বিকাশে বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। ভ্যাট অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্যের ওপর ট্রেড ভ্যাট চালু করে এনবিআর দ্বৈতনীতি অবলম্বন করেছে। এতে খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের হয়রানির পাশাপাশি পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করি আমাদের প্রস্তাব মতে আসছে বাজেটে ভ্যাট বিষয়ে সহায়ক দিকনির্দেশনা আসবে।
তিনি বলেন, আমাদের আমদানি বাণিজ্য অনেক সহজ হলেও রপ্তানির বড় অংশই প্রতিনিয়ত ট্যারিফ নন ট্যারিফ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই আমাদের রপ্তানির নন ট্যারিফ বাধা অপসারণে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া করোনা মহামারির সময় এই বাজেটে সরকারকে অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতের দিকে নজর দিতে হবে। করোনা প্রতিরোধে অন্তত ৩০ কোটি ডোজ টিকা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মহল্লভিত্তিক করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তা তদারকি করতে ওয়ার্ড বা ইউনিয়নভিত্তিক ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে। কেউ যাতে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে না পারে তাই মহামারি আইন সংশোধন করে শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
খলিলুর রহমান বলেন, প্রায় এক বছর চার মাস দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শিক্ষা খাতের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সপ্তাহের পাঁচদিনের অনলাইন পড়াশোনা পর্যালোচনা করার জন্য অন্তত একদিন মাস্ক পরে এবং দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ ঘণ্টার জন্য হলেও পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
সান নিউজ/আইকে