চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েই নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার।
মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় এই জিডি করেন। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পান্না আক্তার সোমবার (৩১ মে) সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে জবানবন্দি দেন।
সেখানে বাবুল আক্তারই মিতু হত্যার মাস্টার মাইন্ড এবং বাবুলের নির্দেশে মুছা এ হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি ধারণা করছেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার ক্ষতি করতে পারে। এ কারণে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি জিডি করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
জিডির বিষয়ে পান্না আক্তার বলেন, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডি করেছি। মিতু হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর থেকে নিজের মধ্যে ভয় কাজ করছে। যদিও তাকে কেউ হুমকি দেয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুছা বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স ও তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াতকারী। মিতু খুনের কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা ডিবি মুছার স¤পৃক্ততা নিশ্চিত হয়ে ঘটনাস্থলের ফুটেজ ও ছবি বাবুল আক্তারকে দেখায়। কিন্তু বাবুল আক্তার মুছাকে চেনার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এরপর তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারায় মামলার তদন্তভার ডিবি থেকে পিবিআইয়ে ন্যস্ত করে আদালত। পিবিআই বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুল ও মুছার আত্নীয় গাজী আল মামুনকে নজরদারির আওতায় আনে। গত ১২ মে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে মুছাকে চেনার বিষয়টি স্বীকার করেন বাবুল আক্তার। এরপর এই হত্যাকান্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পিবিআই। ফলে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ডে দেন আদালত। রিমান্ডে বাবুল আক্তার তেমন মুখ খুলেননি। আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজী হয়েও শেষ পর্যন্ত জবানবন্দি না দেওয়ায় আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তাকে ফেনী কারাগারে রাখা হয়েছে।
এদিকে বাবুল আক্তারের গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে থাকেন মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর পরিবারের সাথে ছিল মুছা। তখন বাবুল আক্তার কয়েকটি ল্যান্ডফোন নম্বর থেকে মুছার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। এসময় মুছাকে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দেন বাবুল। ধীরে ধীরে সব সামলে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় তাকে।
কিন্তু পান্নার দুই ভাইকে আটকের পর মুছা সব ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয় বাবুলকে। এক পর্যায়ে স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথাও। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের ২২ জুন চট্টগ্রামের কাটগড় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মুছাকে তুলে নেয়া হয়। যদিও মুছাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে সে সময় গণমাধ্যমে মুখ খুলতে চাইলে, বাবুলের ঘনিষ্ট দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ করেন পান্না আক্তার।
সান নিউজ/ আইকে