নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে এসব ঘের তলিয়ে অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তর। করোনা মহামারির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তার কোন বিকল্প দেখছেন না প্রান্তিক পর্যায়ের মৎস্য চাষিরা।
সরেজমিন পরিদর্শেনকালে জেলার করাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ, হাজিগঞ্জ, পুরান মহিপুর, রাঙ্গাবালীর চর আন্ডা, নয়ার চর, চালিতাবুনিয়া, দুমকীর আঙ্গারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এবং ভরা পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের থেকে ৭/৮ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদীর পানি খুব সহজেই বেড়িবাঁধ টপকে ঘের এবং পুকুরে প্রবেশ করেছে। কোথাও কোথাও পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে মাছ সব নদীতে নেমে গেছে।
রাঙ্গাবালীর চরগঙ্গা এলাকার সুখী হাওলাদার (৪১), মুকুল মীর (৪৫) জানান, তাদের চিংড়ির ঘের বেড়িবাঁধের ভেতরের অংশে ছিলো। অনেকটা নিরাপদ মনে করেছিলেন। কিন্তু ইয়াসের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে তাদের ঘেরের বাগদা চিংড়ি, সাদা মাছসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকা মাছ নদীতে ভেসে গেছে। বেড়িবাঁধের বাইরে যাদের ঘের রয়েছে তাদের ঘেরের কোন চিহ্নই নেই বলে জানান তারা।
কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ জামাল সেতু সংলগ্ন হাজিগঞ্জ এলাকার রাসেল (২৫), সেলিম আকন(৫৫), রুহুল আমীন(৩৫) জানান, শেখ জামাল সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে শহীদ আলাউদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত সোনাতলা নদীর তীরে আড়াই কিলোমিটার এলাকায় প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের রয়েছে। বাগদা চিংড়িংসহ সাদা মাছ চাষ হয় এ সব ঘেরে। নদীর পাড় ধরে ছোট্ট একটি রিং বেড়িবাঁধ রয়েছে। ইয়াসের জোয়ারের পানিতে এবার পুরো এলাকা তলিয়ে নদীর সাথে মিশে যায়। বোঝার উপায় ছিলো না কোনটা নদী আর কোনটা ঘের।
এই অর্ধশতাধিক ঘেরে কয়েক কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সরকারি সহয়তা না পেলে এসব ঘের চাষিদের ঘুরে দাঁড়ানো কোন অবস্থায় সম্ভব নয় বলে দাবি তাদের।
জেলা পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জোয়ারের চাপে বিভিন্ন পোল্ডারের প্রায় শতাধিক জায়গায় বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে এ বাঁধ মেরামতের জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা মৎস্য চাষিরা ইয়াশের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার প্রায় সাড়ে সাত হাজার ঘের পুকুর জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। সরকারি হিসেব মতে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের মোবাইল নাম্বারসহ তালিকা প্রস্তুত করা শুরু করেছে মৎস্য বিভাগ। বরাদ্দ পেলে তাদের আর্থিক সহয়তা প্রদান করা হবে।
সান নিউজ/ আরএস