চট্টগ্রাম ব্যূরো : জমির দখল নিয়ে দায়ের করা মামলার তদন্তভার পেয়ে বাদীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে জুতাপেটা করলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীন। এ সময় অলিখিত স্ট্যা্েম্প বাদী ও তার মা-ভাইয়ের স্বাক্ষর আদায়েরও চেষ্টা করা হয়।
শনিবার (২৯ মে) সকালে এ তথ্য জানান নির্যাতনের শিকার সুজন ধর ও তার ভাই রুপন ধর। এ বিষয়ে গত ২৭ মে তারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনও করেন। এর আগে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেন তারা।
সুজন ধর ও রুপন ধর জানান, মৌরশী সম্পত্তি দখল নিয়ে লেলাং ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের বনিকপাড়ার বাসিন্দা বেনু ধর, নয়ন ধর, খোকা ধর, উত্তম ধর ও অমল নাথের বিরুদ্ধে ২৪/১১/২০২০ইং তারিখে সি.আর ২৬৮/২০ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তের জন্য লেলাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীনকে তদন্তভার দেন আদালত। এই দায়িত্ব পেয়েই চেয়ারম্যান বিবাদীর পক্ষ নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় আমার বাড়িতে চৌকিদার হায়দার, রিপন, বেলাল ও এমদাদকে পাঠান। এ সময় তারা আমরা দুই ভাইয়ের হাত কোমরে বেঁধে ফেলে তারা। কিল-ঘুষি-লাথি ও জুতা দিয়ে মারতে থাকে। গ্রামের শতশত জনগণের সামনে এভাবে বর্বর নির্যাতন করতে করতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যায়।
সেখানে বাউন্ডারির ভেতরে আমাদের কামরাঙা গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। বাঁধা অবস্থায় আমাকে, আমার মা ও ভাইকে অলিখিত স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন চেয়ারম্যান। তাতে অসম্মতি জানালে আমার বৃদ্ধ মা ও উপস্থিত লোকের সামনে চেয়ারম্যান তার পায়ের জুতা খুলে আমাকে ও আমার ভাইকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। ফলে হাতে, মূখে, বাম কানের নীচে জখম হয়। এভাবে বাঁধা অবস্থায় প্রায় ৩ ঘণ্টা চেয়ারম্যান ও চৌকিদাররা শারীরিক নির্যাতন চালায়।
সেই সঙ্গে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। অন্যথায় ভবিষ্যতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে চরম বদলা নিবে বলে জানায় তারা। এছাড়া চেয়ারম্যানের ইন্ধনে বিবাদীগণ বাদীর পূর্ব-পুরুষের রোপণকৃত সেগুন, জারুল, মেহগনিসহ মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যায়।
নিরুপায় হয়ে বাদী ঘটনার পরদিন ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা এখন ফটিকছড়ি থানা ওসির তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে ফটিকছড়ি থানার ওসি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, গত ২৪ এপ্রিল বাদীপক্ষ অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান মো. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীন বলেন, বাদী সুজন ধর তিনজনের নামে কোর্ট মামলা করেছে। কোর্ট মামলাটি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়েছে। কিন্তু তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও বাদী নোটিশ গ্রহণ করে নাই। তাই গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ধরে নিয়ে আসি। আচরণ খারাপ করায় জুতা দিয়ে মেরেছি। এটা সত্য। কিন্তু সেটাকে আমার প্রতিপক্ষরা কাজে লাগাচ্ছে।
সান নিউজ/ আইকে/বিএস