নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: যিনি নিজের কঠোর শ্রম দিয়ে লালন পালন করে উপার্জনক্ষম করলেন তিনটি সন্তানকে। সেই সন্তানরাই আজ অসুস্থ পিতার দায়িত্ব নিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে ফেলে দিলো রাস্তায়। পুলিশ ও এলাকাবাসীর শত অনুরোধও তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারলো না।
মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা মঞ্জিলের বাসার সিঁড়ির পাশে সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন বৃদ্ধ অরুণ দে (৭৫)। বাসার ভেতর থেকে কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ অবস্থা দেখে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিদর্শক অজয় রায় বৃদ্ধের অসহায়ত্বের কথা জানালেন ৯৯৯ এ ফোন করে। সংবাদ পেয়েই মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া এর নির্দেশে মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ পরির্দক (তদন্ত) গোলাম মতুর্জা ও পুলিশ পরির্দক (অপরারেশন) মোঃ মশিউর রহমান এর তত্ত্বাবধানে একদল পুলিশ ছুটে আসলেন বৃদ্ধের বাসায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
জানা যায়, অরুণ দে (৭৫) দীর্ঘ দিন শহরের অভিজাত ম্যানেজার স্টলের মিষ্টির কারিগর ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তার ২ছেলে বিল্পব দে ও অর্জুন দে, রীতা দে নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তার ২য় সন্তান অর্জুন স্ত্রী-সন্তানকে রেখে মৃত্যু বরণ করেন। সেখানেই তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন। বড় ছেলে বিল্পব দে বিয়ে করে তার স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আর সুনামগঞ্জে স্বর্ণের কারিগর হিসাবে কাজ করে। কারোর কোনো খোঁজ খবর নেয় না তিনি।
মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ পরির্দক (তদন্ত) গোলাম মতুর্জা জানান, সংবাদ পেয়ে বৃদ্ধকে প্রায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেছি। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। পরিবারের ছেলে-মেয়ে ও ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি আমরা। কিন্তু কেউ তাদের বাবার দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেনা। তিনি যে, পুত্রবধূর কাছে থাকতেন, সেই পুত্রবধূ নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শ্বশুরের দায়িত্ব নিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। এখন এই বৃদ্ধ কার কাছে যাবে ? মানবিক কারণে এই অসহায় বৃদ্ধের পাশে দাঁড়াতে সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করেন।
সান নিউজ/আরএস