চট্টগ্রাম ব্যূরো : ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকুলীয় এলাকায় খোলা হয়েছে ৫০০ নিরপাদ আশ্রয়কেন্দ্র। জেলার প্রতিটি উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ টাকা করে। ২৪ মে সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়তে পারে। সে হিসেবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাইসহ সবকটি উপকুলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য উপকুলীয় এলাকায় ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে উপকুলীয় মানুষজনদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেই সাথে প্রত্যেক উপজেলায় এক লাখ টাকা করে জরুরি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। এলাকায়-এলাকায় মাইকিং চলছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিন্মচাপটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এ পরিণত হয়েছে। এটি একই এলাকায় (১৬.৬০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এটি ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে। ঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিশেষ সতর্ক বার্তায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে ২৩ মের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। সে মোতাবেক সাগর থেকে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ঝাঁকে ঝাঁকে চট্টগ্রামে ফিরতে শুরু করে। ২৩ মে রবিবার বিকেলের মধ্যে শত শত মাছ ধরার ট্রলার কর্ণফুলী নদীর মাঝিরঘাট ও ফিশারীঘাটে ফিরে আসে।
ট্রলার শ্রমিকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগরের বুকে আছড়ে পড়ছে বিশাল-বিশাল ঢেউ। বইছে ঝড়ো হাওয়া। ফলে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলো। এদের মধ্যে বেশ কিছু ট্রলার ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের উপকুলে ফিরেছে। বাকীগুলোও ফেরার পথে রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে রবিবার ভোরে এবং বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া বইয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে খড়া রোদের সাখে আকাশে ঘন মেঘের আনা গোনায় লু-হাওয়া বইয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক এ সম্পর্কে বলেন, ঘুর্ণিঝড় পরিস্থিতির ওর আমাদের নজর রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে কোন সময় যে কোন পদক্ষেপ সংক্ষিপ্ত সময়ে নেওয়ার সক্ষমতা বন্দরের রয়েছে। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে থাকায় কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
সান নিউজ/আইকে