নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি: এবছর আবহাওয়া অনুকূলে না থেকে টানা ৮মাস বৃষ্টি না হওয়ার কারণে রাঙামাটি পার্বত্য এলাকায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়নি। আবার স্থানীয় বাজারে লিচুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশ মন্দা। সেই সাথে ফলন কম ও আকারে ছোট থাকায় বাগান মালিকরা হতাশ ও ক্ষতির সম্মুখীন।
লিচুর মৌসুমে প্রতিবছর ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে ফল কিনতে আসেন অনেক ব্যবসায়ীরা। রাঙামাটির স্থানীয় বাজারে এবং লিচু বাগানগুলোতে পাইকার ব্যবসায়ীদের ভিড় লেগে থাকত। এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন না হওয়ায় এবং আকারে ছোট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তেমন বাজারে আসেনি। ব্যবসায়ীরা বাজার এবং বাগানে না আসায় তেমন দাম পায়নি কৃষকরা।
সরেজমিনে রাঙামাটি শহরের ভাসমান ফলের বাজার সমতাঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আকার ভেদে ১০০টি দেশি লিচু ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরও এই লিচুর দাম ছিল ৮০-১০০ টাকা। চায়না-৩ লিচু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০-১২০ টাকায়। গেল বছর উন্নত জাতের সুস্বাদু এই লিচু বিক্রি হয়েছিল ৩০০-৩৫০ টাকায়।
রাঙামাটি সদর উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের লিচু বাগানের মালিক সুবির কুমার চাকমার বাগানে ১০০ লিচু গাছ রয়েছে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো না হওয়ায় লিচুর উৎপাদন খুব ভালো হয়নি। দামও তেমন পায়নি। অন্যান্য বছর ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগানে এসে ফল পাকার আগেই পুরো বাগান কিনে নিয়েছিলো। এই বছর তারা আসেনি। বাজারে নিজে বিক্রি করতে গিয়েও দাম পায়নি তেমন।
একই ইউনিয়নের হারেক্ষং গ্রামের শান্ত কুমার চাকমা (৪০) জানান, গত বছর তিনি লিচু বিক্রি করে এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন। এবার অর্ধেকও দাম পাননি তিনি। লিচু আকারে ছোট হয়েছে তাই দাম পাননি বলে যোগ করেন তিনি। তবে বাজারে চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় ফলের ব্যবসায়ী মুহাম্মদ মনির জানান, করোনার ভয়ে ব্যবসায়ীরা এ বছর রাঙামাটিতে আসতে পারেনি। স্থানীয় ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কিছু ফল কিনে ব্যবসা চালাচ্ছি। কিন্তু লোকজন লকডাউনে বাড়িতে আটকে থাকায় কাঙ্খিত সংখ্যায় ক্রেতা নেই। তাছাড়া এ বছর লিচু আকারে ছোট। বাগানে ফলন ভালো হয়নি। চাহিদা থাকলেও দাম নেই তেমন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, জেলা জুড়ে প্রায় চার হাজার ৫৭০ একর জমিতে লিচু গাছ আছে। চলতি মৌসুমে কমপক্ষে ১৫ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদিত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক বলেন, এটা সত্য যে এই বছর মহামারির কারণে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। তবে মোটামুটি বাজারে দাম রয়েছে চাহিদা থাকার কারণে। এই বছর লিচুর উৎপাদনও ভালো হয়নি, লিচু আকারে ছোট হয়েছে অনাবৃষ্টির কারণে। দাম না পাওয়ার এটি একটি বড় কারণ। তবে কৃষি বিভাগ জেলার সকল কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়ন ও ফলন ভালো হওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সান নিউজ/আরএস