চট্টগ্রাম ব্যুরো: যানজট নিরসন ও বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে। প্রায় সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার জুড়ে চারটি মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে চীনা প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে চীনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মেট্রোরেল নয়, চট্টগ্রামে প্রয়োজন মনোরেল। যা মেট্রোরেলের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম সাশ্রয়ে করা যাবে। এটির জন্য ব্যাপক জায়গার প্রয়োজন হবে না। স্থাপনার ভেতর দিয়েও লাইনটি স্থাপন করা যায়। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে এই মনোরেল চালু করা সম্ভব হবে।
২০ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন কথাই জানালেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি টিম বুধবার (১৯ মে) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে করপোরেশনের অস্থায়ী নগর ভবন কার্যালয়ে স্বাক্ষাৎ করে চট্টগ্রাম শহরে মনোরেল চালুর প্রস্তাব দেন।
প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি মেং, চায়না রেলওয়ে কোম্পানির মি. এরিখ।
করপোরেশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দীন, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম মানিক, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব, মেট্রোরেল প্রকল্পের কোদায়ারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রকৌশলী আবিদ রহমান তানভীর।
মনোরেল চালু করতে কতদিন সময় লাগতে পারে, আর্থিক ব্যয় পরিমাণ, অর্থের সংস্থান, মেট্রোরেল ও মনোরেলের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের প্রধান লি মেং জানান, মেট্রোরেলের চেয়ে ৪০ শতাংশ সাশ্রয়ে মনোরেল স্থাপন করা সম্ভব। এজন্য ব্যাপক জায়গার যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি স্থাপনার ভেতর দিয়েও লাইনটি স্থাপন করা যায়। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মনোরেল স্থাপন করে চালু করা সম্ভব।
মনোরেলে চায়না ব্যয় ও ব্যবস্থাপনার আগ্রহের কথাও জানায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এ সময় তাদের প্রস্তাবনা লিখিত আকারে জমা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া আলোচনায় আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনার আলাপও উঠে আসে।
মেয়র বলেন, ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নগরের একে খান থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ, কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত বিমান বন্দর, অক্সিজেন থেকে বিমান বন্দর, লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর এই চারটি রুটের উপর জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করা হয়েছে।
এখন চীনা প্রতিষ্ঠান মনোরেল চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। এই দুটি প্রস্তাবনার উপর যাচাই-বাছাই করে জনসংখ্যার ঘনত্ব, সময়, আর্থিক সাশ্রয় বিবেচনা ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে টেকসই করতে যদি মনোরেল চালু ভালো হয় তবে তাই করা হবে।
মেয়র আরও বলেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল (এমআরটি) নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মেট্রোরেলের সাথে জড়িতদের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জন্য অবিলম্বে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। যা ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে চীনা প্রতিষ্ঠান।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। ফলে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটারে তিনটি মেট্রোরেল লাইনে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৮৪ হাজার ২০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনটি লাইনে মোট ৪৭টি স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। একটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটির মাধ্যমে ঘণ্টায় এর দুই প্রান্তের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী উভয় দিকে পরিবহন করা সম্ভব হবে। আর এ নিয়ে মেট্টোরেলের স্বপ্ন দেখা শুরু করে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দা।
সান নিউজ/ আইকে/ আরআই