নিজস্ব প্রতিনিধি, ভোলা: মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ থাকছে। মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ বুধবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এদিকে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়ার চিন্তাই চরম উৎকণ্ঠায় ভোলার ৬৩ হাজার জেলে। অভাব-অনটনে আর সংকটের মধ্যে পড়ার আশংকায় হতাশার ভাঁজ কাপালে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবেন সে চিন্তায় দিশেহারা। করোনা পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব এবং জেলেদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাতিল অথবা পরিবর্তনের দাবি জেলেদের। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানালেন নিবন্ধিত ৬৩ হাজার জেলেদের দেয়া হবে খাদ্য সহায়তা।
মার্চ-এপ্রিল ২ মাস বিভিন্ন নদীর অভয়াশ্রম গুলোতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ পর ফের সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় হতাশ ভোলার সমুদ্রগামী জেলেরা। তাদের মতে মৌসুম না আসায় মে-জুনে নদীতে এমনিতেই ইলিশ থাকেনা। এসময় সমুদ্র এলাকায় কিছু ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু নদীতে দু মাস মাছ শিকার করতে না পাড়ায় যে ক্ষতির কবলে পড়েছেন জেলেরা তার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগ মুহূর্তে সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার এমন নির্দেশকে তারা বিনা মেঘে বর্জপাতের মতো ঘটনা বলে মনে করছেন।
মাছ ধরা বন্ধ তাই ভোলার উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রগামী জেলেরা জাল, ট্রলার ও ফিশিংবোর্ট নিয়ে সাগর থেকে নিজ নিজ ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন এরই মধ্যে।
ভোলার দৌলতখানের সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া রফিক মাঝি বলেন, এমন নিষেধাজ্ঞা থাকলে নৌকা, জাল, জ্বালানি ও শ্রমজীবী জেলেদের ব্যয় নির্বাহ করে এ পেশায় টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অথবা সময় কমিয়ে ১ মাসে আনার দাবি জানিয়েছেন।
আরেক জেলে সহিজল মাঝি বলেন, নদীতে ২ মাসের অভিযান ছিলো। তখন আমরা মাছ ধরি নাই। এখন নদীতে যাই। কিন্তু মাছ পাইনা। এমনকি মাছ ধরার খরচের টাকাও ওঠে না। এখন মাছের আশায় সাগরে জামু তাও দিছে আবার দুই মাসের অভিযান। এই অভিযানেই আমাগো মাছ ধরার সময় শেষ হয়ে যায়।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ায় গেলো বছর ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ আরও গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। এ সময় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য ভোলার ৬৩ হাজার ৯ শত ৫৪ জন সমুদ্রগামী জেলের জন্য বিশেষ প্রনোদণার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং যথা সময়ে প্রনোদণার চাল বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বিত পদক্ষেপ থাকবে। যাতে অবৈধ ভাবে কেউ মাছ ধরতে না পারে।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে গেলে জেলেদেরকে কারা দণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ১শত ৬৪ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৩ শত ৩০জন জেলেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সান নিউজ/আরএস