নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার অর্থ প্রকৃত ভাতা-ভোগীদের না দিয়ে কর্তব্যে অবহেলা করে অন্য ব্যক্তিদের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ফলে সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কয়েকশ ভাতাভোগী। এছাড়া শিকার হচ্ছেন নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির।
সরকারি ভাতার টাকা প্রকৃত ভাতা-ভোগীদের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ কর্তৃপক্ষের কাজে অবহেলার কারণে এমনটা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
ভাতা-ভোগীরা বলছেন, আমরা গ্রাম পুলিশ ও ইউপি মেম্বারদের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও তাতে যে মোবাইল নাম্বার দিয়েছিলাম সে নাম্বারে টাকা পাইনি। অন্য কোন অজানা নাম্বারে টাকা পাঠানো হয়েছে। তারা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
ঘটনা চক্রে বুধবার (১৯ মে) দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে কয়েক শত বয়স্ক মহিলা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের লম্বা লাইন দেখা যায়। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতেই তারা অভিযোগের ঝুলি খুলে বসেন।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সদর উপজেলার আখড়াখোলা বাউলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মোছা: রাশিদা খাতুন জানান, ‘আমার ছেলের নাম মো. আরিফুল ইসলাম। সে প্রতিবন্ধী। সরকারিভাবে আমার ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পায়। কিন্তু এবার আমাদের চৌকিদার আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কার্ডের ফটোকপি ও আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে আসে। বলে ঈদের আগে এই নাম্বারে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে টাকা আসবে। আর সমাজসেবা অফিস থেকে টাকা নেয়া লাগবে না’। তিনি আরও জানান, ‘ঈদের ৫দিন পার হলেও আজও আমার ‘নগদ’ নাম্বারে ভাতার টাকা আসেনি। এজন্য আজ সমাজ সেবা অফিসে আসলাম। এখানে এসে জানতে পারলাম অন্য একটি ‘নগদ’ নাম্বারে আমার ছেলের টাকা চলে গেছে। সেখান থেকে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তারা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে’।
ওই লাইনেই দাঁড়ানো সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন জানান, ‘আমার নিজের মোবাইল নাম্বার ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি চৌকিদার নিয়ে আসে। বলেছিল আমার মোবাইল নাম্বারে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে ঈদের আগে বয়স্ক ভাতার টাকা পাঠাবে। কিন্তু এখনও টাকা না পেয়ে এখানে এসে জানতে পারি আমার টাকা অন্য একটি ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। সেই নাম্বারে কথাও বলেছি। সে বলেছে তার নাম্বারে অন্য একজনের টাকা আসার কথা ছিল। তার টাকা এসেছে সে টাকা তুলেও নিয়েছে’।
এ বিষয়ে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর সাতক্ষীরা টেরিটরি অফিসার মো. শাহিনুর ইসলাম তাদের দায় অস্বীকার করে বলেন, ‘এক্ষেত্রে দুইটা ভুল হয়েছে। কিছু ব্যক্তি আমাদের এখানে আসছেন তাকে বলা হচ্ছে এই নাম্বার আপনার ছেলের? তিনি বলছেন হ্যাঁ এই নাম্বার আমার ছেলের। পরবর্তীতে দেখা গেছে এই নাম্বারটি তার ছেলের না। সেটা অন্য কারোর। এক্ষেত্রে তো ‘নগদ’ কর্তৃপক্ষ বা সমাজসেবা অফিসার কেউতো দায় ঘাড়ে নেবে না’।
তিনি আরও জানান, আমরা এই বিষয়টার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাছাড়া যাদের ভুল নাম্বারে টাকা চলে গেছে তাদেরকে আমরা ডাকছি এবং নাম্বার সংশোধন করে দিচ্ছি।
তবে যেসব ভাতা-ভোগীদের টাকা অন্য নাম্বারে পাঠানো হয়েছে সে বিষয়ে কোন সমাধান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার কোন সমাধান আমাদের কাছে নেই’।
এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শেখ সহিদুর রহমান জানান, ‘ভাতা-ভোগীদের টাকা এখন আমাদের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে না। ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাতা-ভোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে’। তবে ভাতা-ভোগীদের টাকা অন্য কোন নাম্বারে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কাজ নয়, সুতরাং আমাদের ভুলের কোন বিষয়ও না। এ বিষয়ে ‘নগদ’ এর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন’। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চেষ্টা করছি ভোগান্তির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কিছু করা যায় কিনা।
সান নিউজ/আরএস