নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বধূকমলা গ্রামে বছরের পর বছর ধরে বন্দি জীবন কাটচ্ছেন মা ও ছেলে।
জানা যায়, ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল অটোচালক আব্দুর রশীদের। হঠাৎ বড় ছেলে দুখল মিয়া (৩০) মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তাকে ঘরের ভেতর শিকল বন্দি করে রাখা হয়। এর কিছুদিন পর তার মা দুলালী বেগমও (৫৫) মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকেও আলাদা ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। তাদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন আব্দুর রশীদ। তবু সুস্থ হয়ে ওঠেননি তারা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রথমদিকে দুখল মিয়ার অসুস্থতা কারও জন্য ভয়ের কারণ না হলেও পরে উন্মাদ হয়ে যান দুখল মিয়া। শরীরে কোনো কাপড় পড়েন না, সব সময় উলঙ্গ থাকেন। গ্রামের লোকজনের ওপর চড়াও হন। যাকে সামনে পান তাকেই মারধর করতেন। ফলে পরিবারের লোকজন প্রায় ৮ বছর থেকে তাকে একটি ঘরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। কেউ কাছে যেতে পারেন না। দূর থেকে তাকে খাবার দেয়া হয়। মলমূত্র ঘরেই ত্যাগ করেন। সারা শরীর কাদামাটিতে মাখা থাকে।
এদিকে, ছেলে বদ্ধ উন্মাদ হওয়ার কিছুদিন পরে মা দুলালী বেগমেরও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকেও প্রায় ৭ বছর ধরে পৃথক আরেকটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। ঘরেই খাওয়া দাওয়া, মলমূত্র ঘরেই ত্যাগ করেন দুলালী।
অটোচালক আব্দুর রশীদ বলেন, আমার পরিবারটি এক সময় সচ্ছল ছিল। কিন্তু একই পরিবারের দুজন পাগল হওয়াতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব । ভিটাবাড়ি ছাড়া বিক্রি করার মতো এখন কিছুই নেই। অটো চালিয়ে কোনো রকমে পেট চালাচ্ছি। স্ত্রী-পুত্রের চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য এখন নেই।
এখন আব্দুর রশীদের একটিই আকুতি নিয়তির এই নিষ্ঠুরতা থেকে স্ত্রী-ছেলেকে রক্ষা করা আর তাই তাদের ভালো চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সান নিউজ/আরএস