ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পচনশীল পণ্যের হিমায়িত কনটেইনারের চাপে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে খালাসবিহীন এসব কনটেইনার পড়ে থাকায় আমদানিকারক ও সরকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বন্দরে পচনশীল পণ্যের ৩ হাজার একক হিমায়িত কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৫০০ একক কনটেইনার বর্তমানে জমা পড়ে আছে। এতে কনটেইনার জটের চাপ বাড়ছে। আবার যথাসময়ে খালাস না করলে পণ্যগুলো নষ্ট হয়ে বাণিজ্যিক মূল্যও হারায়। পাশাপাশি সরকার রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হয়।
এছাড়া কনটেইনারগুলো সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক সংযোগসহ ফ্রিজের মত সংরক্ষণ করতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ডে ১ হাজার ৭৮২টি প্লাগ পয়েন্ট রয়েছে। এসব প্লাগ পয়েন্ট থেকে বড় বড় কনটেইনারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যা ব্যয় বহুল ও কষ্ঠসাধ্য।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বন্দরের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত ছিল বন্দর। ওই সময় কনটেইনারগুলো দ্রুত খালাসের জন্য আমদানিকারকদের চিঠিও দিয়েছি। অথচ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি, শিপিং এজেন্ট অফিস ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সসহ সংশ্লিষ্টরা আসেনি। আমরা যতই বলি না কেন, আমদানিকারকরা তাদের সময়মতোই পণ্যের ডেলিভারি নেয়।
তবে কিছু কিছু আমদানিকারক আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। বাকি আমদানিকারকরাও যথাসময়ে পণ্য খালাস করে আমাদের সহযোগিতা করবেন। দ্রুত সময়ে আবারও আগের মতো জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম গতিশীল হবে এমনটাই আশা করছি আমরা।
বন্দরের তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে বন্দরে শুধু হিমায়িত কনটেইনার নয় অন্যান্য পণ্যবাহী কনটেইনার ভর্তি পণ্য খালাসেও নেমে আসে ধীর গতি। গত ১৫ মে বন্দরে জমে থাকা ৩৬ হাজার ৯৯০টি কনটেইনারের মধ্যে ডেলিভারি হয় মাত্র ৪৮১টি কনটেইনার। পাশাপাশি ১৬ মে ৩ হাজার ৪১৪টি কনটেইনার নতুন করে যোগ হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।
এরমধ্যে ২ হাজার ৫০০ একক হিমায়িত কনটেইনার। যার মধ্যে তাজা ফল, আদা ও রসুন বোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা বেশি। ঈদ পরবর্তী সময়ে বাজার ধরার জন্য অনেক আমদানিকারক এসব কনটেইনার খালাস না করে বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাদ্য ও প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। পাশাপাশি পণ্যের রেডিয়েশন টেস্ট যথাসময়ে না হবার কারণে পণ্যের ডেলিভারিতে বিলম্ব হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা-লকডাউন-ঈদের ছুটি সবমিলিয়ে পণ্য খালাসে একটু ভাটা পড়েছে। আমদানিকারকরাও যথাযথভাবে সহযোগিতা করতে পারেনি। তবে আমরাও চেম্বারের পক্ষ থেকে আমদানিকারকদের যথাসময়ে পণ্য খালাসের ব্যাপারে বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যার সুরাহা হবে।
এদিকে স্থলপথ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা হিমায়িত কনটেইনারের জট কমাতে পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে বিধিমালা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের বিধিমালায় বলা হয়, পচনশীল পণ্য আমদানি করলে তা চটজলদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরেও পণ্যের চালান পরীক্ষণ ও শুল্কায়নের কাজ চলবে। বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর সব মিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য খালাস করতে পারবেন আমদানিকারকেরা।
শুল্ক বিভাগের নতুন বিধিমালায় পচনশীল পণ্য তালিকার মধ্যে রয়েছে জীবন্ত পশু-পাখি ও প্রাণী, জীবন্ত হাঁস-মুরগি-টার্কি ও এগুলোর বাচ্চা, জীবন্ত ও হিমায়িত মাছ, মাছের পোনা, জীবন্ত গাছপালা, মাশরুম, তাজা ফুল, তাজা ফল, খেজুর, ডাল, ছোলা, চিনি, লবণ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, হাঁস-মুরগির ডিম, চকলেট, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, চিপস, চানাচুর, আচার, শুঁটকি মাছ, চা-পাতা, কফি, সুপারি, বাদাম, সার, কাঁচা চামড়া, ভোজ্যতেল, পেয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, কাঁচা হলুদ, তেঁতুল, তাল মিসরি, কিশমিশ, অনধিক ছয় মাস মেয়াদযুক্ত সব খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধন সামগ্রী, ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল।
উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে গত দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৬ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। তবে আগের অর্থবছরের একই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১৯১ একক।
সান নিউজ/আইকে/আরআই