নিজস্ব প্রতিনিধি, গাজীপুর: কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যেখানে সকল পর্যটন কেন্দ্র ও পার্ক বন্ধ। এ উপলক্ষে গাজীপুরের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ মহাসড়কের পাশে, বড় গাছের ছায়ায়, নদীর উপর নির্মিত সেতু ও ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে সুন্দর পরিবেশ ঈদ আনন্দ উদযাপন করছে। বদ্ধ পরিবেশ থেকে বের হয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে উম্মুক্ত ও খোলামেলা জায়গায় ঘুরতে বের হয়েছেন তারা। সামাজিক দূরত্বের বালাই না থাকলেও ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অনেককেই মাস্ক ছাড়াই ঘুরতে দেখা গেছে।
ঈদের দিন নামাজের পর থেকেই রাস্তাঘাটে মানুষ যে যার মতো করে ঘুরছেন, কাটিয়েছেন নিজের মতো সময়। অনেকে পরিবার নিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আশপাশের মনোরম পরিবেশ ও দর্শনীয় স্থান দেখতে ঘর থেকে বের হয়েছেন ঘুরতে। তবে উপচে পড়া ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে দর্শণার্থীদের। বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় কাপাসিয়ার বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ সেতু ও শ্রীপুর উপজেলার বরমীর বরামা ব্রীজের ওপর মানুষ এসেছেন বিনোদনের জন্য। সেতু ও ব্রীজে আগতদের অর্ধেকই তরুণ-তরুণী। অন্যরা এসেছেন স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে।
স্কুল ছাত্র রবিউল, সূজন, বায়েজীদসহ তারা ১০ বন্ধু এসছেন কাওরাইদ থেকে। তারা বলেন, টানা এক বছর ধরে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঘুরতে যাওয়ার তো আর জায়গা নেই। সব সময় তো বাসায় থাকা হয়। তাই ঈদের পরদিন কয়েক জন বন্ধু মিলে আমরা একটু ঘুরতে এসেছি এবং ঈদের আনন্দটা উপভোগ করতে পেরে ভালই লাগছে।
উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। বাড়িতে না থাকার কারণে স্ত্রী-সন্তান অনেক দিন যাবত ঘরবন্দি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। তবে বরামা ব্রীজে মানুষের এতো ভিড় আগে জানলে আসতাম না।
শনিবার দুপুরের পর এবং রোববার সারাদিন থেকেই শ্রীপুর উপজেলার বরমীর বরামা শীতলক্ষা নদীর ব্রীজের উপর ও কাপাসিয়ার বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ সেতু ওপর ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় দেখা যায়। সেতুর পাশেই ফুচকার দোকান, শিশুদের খেলনার দোকান, দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই এ দুটি সেতুতে ভিড় বাড়তে থাকে বলে জানায় ফুসকা বিক্রেতা আব্দুল জলিল ও খেলনা বিক্রেতা জাহেদ আলী ।
গাজীপুরের টঙ্গীতে নোমান গ্রুপের পোশাক কারখানায় চাকুরি করেন ফজলুল হক। তিনি বলেন, গার্মেন্টসে চাকরি করি। রাত-দিন ডিউটি করতে হয়। সময় পাইনা একটু ঘুরার জন্য। এদিকে, করোনার কারণে বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে সহপাঠি বন্ধুদের নিয়ে একটু বিনোদনের খোঁজে বরমীর বারামা ব্রীজে এসেছি। এখানে এসে দেখি আমার মতো অনেকেই তাদের আত্মীয়-স্বজন ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে ঘুরতে আসছে। সত্যিই ব্রীজে ঘুরতে এসে খুব মজা লাগছে।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন স্ত্রী-সন্তান অনেকদিন যাবত ঘরে বন্দী। শুনেছি অনেকে বরামা ব্রীজে ঘুরতে আসে। তাই, আমিও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসছি। চিন্তা করলাম একটু ঘুরে আসি। তবে এখানেও অনেকেই আমার মতই স্বস্তি খুঁজতে এসেছেন।
বৈশ্বিক এই মহামারির মধ্যে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হলেও তারা ঈদ উদযাপন করতে ঠিকই রাস্তায় বের হয়েছে। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে দেখা গেছে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের বিভিন্ন ফাঁকা মাঠে ও পথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
ঠিক তেমনি চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ওয়ায়েদ্দা দিঘীর পাড় ফাঁকা মাঠে। শ্রীপুর পৌরসভার কেন্দ্রীয় ইদগাহ মাঠ (ওয়ায়েদ্দা দিঘীর) পাড় দীর্ঘ দুই কিলোমিটার লম্বা মাঠের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশে একত্রিত হয়েছিল। কেউ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আবার কেউ নিজের পছন্দের মানুষকে সাথে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। এই মাঠে তাদের প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেছে। আবার কেউ মাঠের মধ্যে বসে গল্প করে সময় পার করছেন।
স্থানীয় পোশাক কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মী সাকিবুল হাসান সানি বলেন, ঈদ উদযাপন করার জন্য এই ফাঁকা মাঠকে বেছে নিয়েছি। ঘুরে বেড়ানোর জন্য সব জায়গা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে এখানে এসেছি। দিঘীর পাড়ে ঘুরতে এসে লোকজনের সমাগম দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান মন্ডল দারা বলেন, ফাঁকা মাঠে কখনো এতো জামায়েত দেখা যায়নি। সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে যখন সবকিছু বন্ধ থাকায় ভ্রমণ পিপাসুরা এ ফাঁকা জায়গাটিতে এসে ভিড় জমিয়েছে।
বরামা ব্রীজ এলাকায় এলাকায় দায়িত্বরত শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন ভূঁইয়া বলেন, মাস্ক পড়ার জন্য বলা হলেও তারা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। জোর করে কি মানুষকে বোঝানো যায়। করোনায় প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবুও করোনার ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করছে না।
সান নিউজ/আরএস