নিজস্ব প্রতিনিধি,রাঙামাটি: কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি সদরের সাথে ৬ উপজেলার নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার নদী পথে তৈরি হয়েছে যাতায়াত ও পরিবহন সংকট। দেখা দিয়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সংকট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে সরকারের মহা পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন পার্বত্যবাসী। এ ৬ উপজেলাবাসীর একমাত্র যাতায়াত নৌ পথ।
কাপ্তাই জলবিদ্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম মোঃ আবদুর জাহের জানান, চলতি মৌসুমে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে রুলকার্ড অনুযায়ী পানি থাকার কথা ৮১ দশমিক ২৪ এমএসএল (মীন সি লেভেল)।সেখানে হ্রদে পানি রয়েছে ৭২ দশমিক ৭৮ এমএসএলের নিচে। অথাৎ প্রায় ৯ ফুট পানি কম রয়েছে। ৬৬ এমএসএল এ- নেমে গেলে বিপদজনক পর্যায়ে চলে যাবে। তখন কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবকটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান,হ্রদে পানি সংকটের কারণে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে ৫টির মধ্যে ৩টি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে।
২৫০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত ১৩মে তিনটি ইউনিটে উৎপাদন হয়েছে ১০২ মেগওয়াট বিদ্যুৎ।কেন্দ্রের উৎপাদন সংকটে বিদ্যুৎ ঘাটতি মারাত্নক আকার ধারণ করছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অবস্থার কোন উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক।
জানা যায়,কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ইতি মধ্যে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা সদরগুলোর লঞ্চ ঘাট থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরত্বে নিচে সরে এসেছে।ফলে এসব উপজেলা গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে না পারায় যানবাহনগুলো ভিড়ে থাকছে মাঝ ও অর্ধেক পথে। পানির স্থর কমে যাওয়ায় প্রায় ৭শ’ ১৯ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে জেগে উঠেছে ডুবোচর ও বিস্তৃর্ণ নিচু ভূমি।
১৯৬০ সালে সৃষ্ট কাপ্তাই হ্রদ গত ৬০ বছরেও ড্রেজিং বা খনন না করায় বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। ফলে প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে খরায় হ্রদের পানি শুকিয়ে গেছে হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় মারাত্মক সংকট। হ্রদের গতি প্রবাহ সচল ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন বা ক্যাপিটাল ড্রেজিং অতিব জরুরি। হ্রদ খনন বা ক্যাপিটাল ড্রেজিং ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব দেওয়া হলেও আজও নির্বিকার সরকার।
রাঙামাটির নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান,পূর্বে হয়তো বা কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব বা পরিকল্পনা ছিল তা আমার সঠিক জানা নেই। আমি এ জেলায় যোগদানের পর বিভিন্ন লোকজন ও কাপ্তাই হ্রদ কর্তৃপক্ষের লোকজন বলছে যে, হ্রদটি খনন বা ক্যাফিটাল ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও হ্রদ নিয়ে উন্নয়ন মূখী পরিকল্পনা করা যায়। তবে কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে সরকারের পক্ষ হতে এখনো আমার কাছে কোন আদেশ আসেনি।
সান নিউজ/আরএস