খালিদ আহমেদ রাজা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। পৃথিবী জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান। সঙ্কটের এ সময়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক মানুষ। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলমান। এমন অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকেই।
এ কর্মহীন মানুষদের নানা গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তুলে ধরেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার তরুণ তপন কুমার। পাড়ার যুবকরা যখন মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলায় এবং ফেইসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে ব্যস্ত, ঠিক তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তুলে ধরেন এলাকার দুঃস্থ-অসহায় মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প।
ব্যক্তিভেদে সন্তান জন্মদানের ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকলেও প্রায় সকলেরই একটা অভিন্ন ইচ্ছা থাকে। প্রায় সকল মা-বাবাই স্বপ্ন দেখে সন্তান মানুষের মতো মানুষ হয়ে শেষ জীবনে তাঁদের দায়িত্ব নেবেন।
এক বুক ভরা স্বপ্ন আশা নিয়ে শিষ্য বালাও ৬টি সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস বড় নির্মম! তাঁর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। বাস্তবে রূপ নেয়নি।
২০২১ সালে এসে মানুষ যখন স্থায়ীভাবে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করছেন, তখন শিষ্য বালাদের মতো দুঃখী মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নেই! নেই দু’বেলা খাবারের নিশ্চয়তাও।
তপন কুমারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি ফেইসবুকে পোস্ট এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসহায় বৃদ্ধা শিষ্যবালার জন্য একটি দোচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি।
তার এ ধরনের কাজ এটিই প্রথম নয়। বিগত প্রায় চার-পাঁচ বছরে শুধু ফেইসবুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এরকম অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে সুবিধাভোগী শিষ্যবালা বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে কোনোমতে চলছে তাঁর জীবন। স্বামীর রেখে যাওয়া একখণ্ড জমিতে খরের ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতেন। সময়ের সাথে সাথে ছেলে-মেয়েরা যার যার সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বৃদ্ধ বয়সে আবারও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন তিনি। থাকার ঘরটি জীর্ণশীর্ণ হলে দুশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েন শিষ্যবালা।
নতুন ওই ঘরটি পাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। ঘরের অর্থ যোগানদাতা ও সংশ্লিষ্ট সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করেন তিনি।
সাননিউজ/এএসএম