নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার একমাত্র স্বীকৃত বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহা দীর্ঘদিন ধরে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছিলেন। তার ছিল না কোন ভরসার জায়গা ও ভালো আবাসস্থল।
মায়া রানী সাহার জন্য এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। তার নির্দেশনায় মায়া রানী সাহার জরাজীর্ণ বাড়িটি সেমি পাকা ভবনে রূপান্তরের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে মায়া রানী সাহার জরাজীর্ণ বসত ভিটায়। পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা নিয়ে সদর উপজেলা প্রশাসন হাজির হয়েছেন তার দোড়গোড়ায়। প্রশাসনের এ নজিরবিহীন উদ্যোগে স্থানীয় জনগণসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
একটি সেমি পাকা ঘরের নির্মাণ সামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে শনিবার (৮ মে) সদর উপজেলার শোভারামপুর গ্রামে বীরাঙ্গনা মায়া রানীর উঠোনে হাজির উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা সমবায় অফিসার এবং স্থানীয় জন প্রতিনিধিবৃন্দ।
বীরাঙ্গনাদের জন্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রতিফলন ঘটেছে ফরিদপুরের অন্য বেশ কয়েকটি উপজেলায়। মধুখালী এবং ভাঙ্গা উপজেলায় বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি মিলেছে এবং চরভদ্রাসনে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াধীন আছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সকল গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আবাসস্থল নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ব্যক্তি ও সংস্থাও এগিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন ফরিদপুরের বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহাকে এই ঘরটি মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছেন যার সার্বিক তত্ত¡াবধানের রয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্যারের নির্দেশনা রয়েছে যে, ফরিদপুরের যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবাসস্থলের কষ্টে আছেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাদের অনুকূলে ঘর বরাদ্দের পূর্ব পর্যন্ত তারা সম্মত থাকলে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে পুনর্বাসন করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এক গণশুনানীর মাধ্যমে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার মায়া রানীর অশ্রæভারাক্রান্ত কন্ঠে শুনেন মুক্তিযুদ্ধে তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথা; তার অসহায়ত্বতার কথা। মায়া রানী সাহার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ জামুকায় প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের ৪০৯ নং স্মারকের প্রজ্ঞাপনে মায়া রানী সাহাকে ৩৮০ নং গেজেটে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি ভাতা পাচ্ছেন এবং তার এই স্বীকৃতির জন্য তিনি প্রশাসনসহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
সান নিউজ/কেটি