শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী : নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল ভবনের নিচতলায় বামপাশের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকতেই পূর্ব দিকে তাকালেই চোখে পড়ে “৭১: শেকড়ের মূর্ছনা” নামে কাচের একটি দরজা। এমন সৌন্দর্যে লেখা হয়েছে যেন সকলকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কক্ষটির প্রবেশ ধারেই রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি। ভেতরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনার ছবি। এছাড়া চারদিকজুড়ে রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি। জাতীয় চার নেতার ছবি, যা দেখামাত্রই চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মূল ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত এ মুক্তিযুদ্ধা কর্নার যেন এক অখণ্ড বাংলাদেশ।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর উদ্যোগে এই কক্ষটি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সাজানো হয়েছে। কক্ষের প্রতিটি দেয়ালে সুবিন্যস্ত বইয়ের র্যাক। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুষ্প্রাপ্য ও গুরত্বপূর্ণ বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কক্ষের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে দেয়ালজুড়ে স্থাপিত বাংলাদেশের বিশাল এক রঙিন মানচিত্র।
শুধু মুক্তিযুদ্ধের বই-ই নয়, পুরো কক্ষে পাকিস্তানের ২৪ বছরের দুঃশাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নানাভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের সবার ছবি ও পরিচিতি টানানো হয়েছে। কক্ষের পূর্ব দিকের দেয়ালে সুন্দর একটি ফ্রেমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যরত একটি সুন্দর ছবি যা মনকে ৭ই মার্চের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ছাড়া জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছবিও রয়েছে সেখানে। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া সাহসী নারীদের ছবি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুষঙ্গ চমৎকার মুনশিয়ানায় দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে। কক্ষটিতে প্রবেশ করলেই অন্যরকম ভালো লাগায় হৃদয়-মন আন্দোলিত হয়। সারা কক্ষে গভীর মমতায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
যে কক্ষটি একসময় পরিত্যক্ত পরেছিল সেই কক্ষটি আজ ইতিহাস অনুসন্ধানী শিক্ষার্থী এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আগ্রহের স্থান হয়ে উঠেছে। এ যেন ছোট্ট কক্ষের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের পুরো বাংলাদেশ।
এছাড়া জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ শ প্রতিষ্ঠানে এই মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোহাম্মদ আনোয়ারুল নাসের বলেন, জেলা প্রশাসকের উদ্ভাবনী চিন্তা থেকেই এই মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের বাস্তবায়ন ঘটেছে। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পুরোটাই এখানে স্থান পেয়েছে। নতুন প্রজন্ম এ কর্নার থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে।
নরসিংদী জেলা স্কুল ও কলেজ শিক্ষক সমিতি (নকশিস) সভাপতি ও ইন্ডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, মুক্তিযুদ্ধা কর্ণার যেন এক কক্ষে পুরো বাংলাদেশ। জেলা প্রশাসকের এই প্রশংসনীয় কাজটি আমাদের উৎসাহিত করেছে।
নরসিংদী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া বলেন, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর মুক্তিযুদ্ধা কর্নার তৈরীতে প্রমাণ হয়, তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে লালন ও ধারণ করেন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানান, আমাদের শ্রেষ্ঠতম অর্জন হচ্ছে মহান স্বাধীনতা। আর এই অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠতম নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই গৌরবকে এক ফ্রেমে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশধারে মুক্তিযুদ্ধা কর্নার স্থাপন করা হয়। নতুন প্রজন্মকে জানাতে, তাদের কাছে মাতৃভূমির প্রকৃত ইতিহাসটা চোখের সামনে তুলে ধরতে এই প্রয়াস। আমি না থাকলেও এই মুক্তিযুদ্ধা কর্নার আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে বিশ্বাস করি। এ ছাড়া আগামী দিনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ ধরেেনর কাজ করার আগ্রহও সৃষ্টি হবে।
সান নিউজ/কেটি